বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পাঁচ বছর

জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাভার প্রতিনিধি

দেশের পোশাকশিল্প খাতের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় পাঁচ বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। লাশের সারি আর ধ্বংসস্তূপে ভারী হয়ে উঠেছিল চারপাশ। পাঁচ বছর পার হলেও স্বজন হারানোর ব্যথা আর আহতদের আর্তনাদ মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহতা। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে গতকাল পালিত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।

সকাল থেকেই বিভিন্ন নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজন, কারখানার শ্রমিক, রাজনীতিবিদ, সামাজিক সংগঠন ও সুশীলসমাজের নেতৃবৃন্দ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে রানা প্লাজার সামনে জমায়েত হন। এ সময় রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। এ ছাড়া রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের কবর জিয়ারত এবং শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ। এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত কর্মসূচিতে যে কোনো মূল্যে শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। সকাল ৭টায় রানা প্লাজার সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাভারের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ রাসেল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিকাশ বিশ্বাসসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, গণফোরাম সভাপতি সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আবু জাফর প্রমুখ।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এর আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ভবনধসের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।

সেদিনের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিক শিলা, বিউটি, মামুন, সাজু ও রাশিদা বেগমরা। ভবনধসের পাঁচ বছর পার হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তারা। মাথা, হাত-পা ও মেরুদণ্ডে ক্ষত নিয়ে এখনো লড়ে যাচ্ছেন অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে। চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

এ ছাড়া নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্মরণে সাভার অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনেও নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যে কোনো মূল্যে শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা আরিফা আক্তার, সাফিয়া পারভীন, ফারুক খান প্রমুখ। তারা বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রানা প্লাজা ধসের মতো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স, এনএপিসহ সব প্রক্রিয়া অব্যাহত ও গতিশীল করতে হবে। রানা প্লাজায় নিহতদের সন্তানরা এ অনুষ্ঠানে আলোকবর্তিকা প্রজ্বালন করেন।

বক্তারা বলেন, শ্রমিকের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে সরকারকে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অবিলম্বে গার্মেন্টসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতের শ্রমিকদের জন্য ইনজুরি প্রটেকশন স্কিম চালু, আইএলও কনভেনশন ১২১-এর পেইন অ্যান্ড সাফারিং বাবদ বাড়তি অর্থ যোগ করে নতুন ক্ষতিপূরণমূলক আইনের দাবি জানান তারা। বক্তারা ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী সব তৎপরতা বন্ধ এবং শ্রমিকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর