রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই সিটি নির্বাচন

নানা প্রতিশ্রুতিতে ভোট প্রার্থনা

গাজীপুর

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দুই প্রধান দলের মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা ও গণসংযোগ জমে উঠেছে। গতকালও তারা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতিতে ভোট চেয়েছেন। জাহাঙ্গীরের উৎসবমুখর প্রচারণা : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের পূবাইল এলাকার ৩৯, ৪০, ৪১ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং শুটিং পাড়া হিসেবে খ্যাত পূবাইলে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে প্রচারণা চালানো হয়। এ সময় মহাজোট নেতারা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং সাধারণ ভোটাররা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় জাহাঙ্গীরের পথসভায় যোগ দেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুকুন্দিরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে হায়দরাবাদ, মেঘডুবি, তালুটিয়া, হারবাইদ মোড়, হারবাইদ নন্দিবাড়ি, মাজুখান, কুদাব, বিন্দান, পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, নওগাঁ, পূবাইল মাদ্রাসা মাঠে পথসভায় বক্তব্য দেন। গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. আখতারউজ্জামান কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পথসভাগুলোতে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি নিজে কাজ পছন্দ করি। নির্বাচিত হলে বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে একটি সচ্ছল সমাজ গঠনের উদ্যোগ নেব। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেব। আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন, আমি আপনাদের একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দেব।’ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী, কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ, বিল্লাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহিদ আল মামুন প্রমুখ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে মতবিনিময় ও গণসংযোগ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন প্রমুখ।

হাসান সরকারের ব্যাপক গণসংযোগ : বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকালে সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকার রাজাবাড়ি থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। পরে কোনাবাড়ির কাদের মার্কেট কুদ্দুস নগর, কেয়া স্পিনিং, মেডিটেক্স, জেলখানা গেট, মাহবুব মার্কেট, কোনাবাড়ি কলেজ গেট, বাঘিয়া পুকুর পাড়. নছের মার্কেট, মিতালী ক্লাব, আমবাগ, তেঁতুল তলা, বিসিক গেট এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন। পথসভা করার সময় হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে থ্রেট করে লাভ নেই। জীবনে অনেককে মোকাবেলা করেছি। ভোটে আমাকে কেউ হারাতে পারবে তা আমি বিশ্বাস করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে ইশতেহার দিয়েছি তা আওয়ামী লীগের কেউ জীবনেও দিতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শ নিয়ে ১০০ জনের কমিটি করব যারা গুরুত্বের ভিত্তিতে ইশতেহার বাস্তবায়নের কাজে সহযোগিতা করবেন। যেটা প্রথমে করা দরকার সেটি প্রথমে করা হবে।’ ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি টঙ্গী-গাজীপুরে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এখন দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। আমি মির্জাপুর কলেজ করেছি কলা বিক্রি করে, কাঁঠাল বিক্রি করে এবং বাঁশ বিক্রির টাকা দিয়ে। এখন গাজীপুরের জমির দাম ২০ লাখ টাকা কাঠা, এখানকার অনেকেই ৫-৭ কাঠা করে জমি দেওয়ার জন্য বসে আছে। সুতরাং নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় করা কোনো বিষয় নয়।’ পথসভায় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিনসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা।

এ ছাড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাসির উদ্দিন ধানের শীষের পক্ষে পথসভা করেছেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামা ওয়াহেদ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারওয়ার, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম তোহা নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন।

প্রশিক্ষণ : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।

রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, প্রশিক্ষণে প্রতি মেয়র প্রার্থীর পক্ষে চারজন, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে দুইজন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে একজন করে মোট ৪৫০ জন নির্বাচনী ও পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর