মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

গতি নেই বে-টার্মিনাল নির্মাণে

মামলা ও বনাঞ্চল জটিলতার কবলে প্রকল্প

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

গতি নেই বে-টার্মিনাল নির্মাণে

মামলা ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণাবিষয়ক জটিলতায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। এর বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ৬৭৪ দশমিক ৬৭৭৫ একর জমি নিয়ে মামলা এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকায় এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও নতুন করে ধীরগতি ভর করেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি শাখা-২ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম জেলার উত্তর হালিশহর, মধ্য হালিশহর এবং দক্ষিণ হালিশহর মৌজার সর্বমোট ৬৭৪ দশমিক ৬৭৭৫ একর জমি অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫-এর “ক” অনুচ্ছেদমতে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। তার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত জমি নিয়ে সিভিল রিভিশন ১৮৪৫/১৫ মামলা চলমান এবং সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় উল্লিখিত বিষয়ে জেলা পর্যায়ে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা এবং সমাধান ও সিভিল রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির পর যথাযথভাবে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।’ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘খাসজমির কিছু ইতিমধ্যে বে-টার্মিনালের পক্ষে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে। তবে আরও কিছু ভূমি নিয়ে জটিলতা আছে। তা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন।’ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপকূল) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্তু চিঠিতে ভূমিসংক্রান্ত নির্দিষ্ট কিছু তথ্য সংযুক্ত ছিল না। তাই পরে আমরা তথ্যগুলো চেয়ে জেলা প্রশাসনকে একটি চিঠি  দিয়েছি। এসব তথ্য পেলেই এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারব।’

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। তাই সময়ের চাহিদামতে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণও জরুরি। আমরা মনে করি, বন্দরের অন্যতম প্রকল্প এই বে-টার্মিনালটি যে কোনো মূল্যে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা হোক। এটা নিয়ে কোনো গড়িমসি কেবল বন্দর নয়, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে না।’ বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে পতেঙ্গার প্রায় ৯০৭ একর জমিতে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে প্রকল্পটি সিডিএর অনুমোদনও পায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় বন্দরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি ধীরগতিতে এগোয়।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে দেশের বহির্বাণিজ্যের প্রায় ৯৩ শতাংশ সম্পাদিত হয়। দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে বর্তমানে বছরে ১৬ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ১৩ শতাংশ, যা দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সর্বশেষ খবর