মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মৃত আসামির শরীরে আঘাতের চিহ্ন!

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে মারা যাওয়া সন্দেহভাজন আসামি মোহাম্মদ আসলামের (৪৫) লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে লাশের পায়ের নিচে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত আসলামের স্ত্রী রিপা আক্তার ও শ্বশুর খলিল মিয়া ডিবি হেফাজতে থাকায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে গতকালও ডিবির ভাষ্য ছিল, অসুস্থতাজনিত কারণেই হাসপাতালে আসলামের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের সময় আমরা নাড়ি প্যাঁচানো পেয়েছি। দুই পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, পেটে নাড়ি প্যাঁচ খেয়ে ছিল। এ ছাড়া তার হার্ড, ব্লাড, ব্লান, ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এদিকে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক হরিচাঁদ হাজরার তৈরি লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনেও দুই পায়ে হালকা কালচে দাগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, আসলামকে অপহরণ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়েছে। এখন চিকিৎসকরাই মৃত্যুর কারণ বলতে পারবেন।

নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ কাউকে মারার জন্য গ্রেফতার করে না। কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হলে তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়।

সূত্র জানায়, নিয়ামুল নামে তার এক আত্মীয়কে অপহরণের অভিযোগে আসলামকে শনিবার রাতে আটক করা হয়েছিল। টানা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ভোরের দিকে তার পেটে ব্যথা শুরু হয়। হার্নিয়ার সমস্যাও ছিল তার। ওই অবস্থায় সকাল ১০টায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসার একপর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে। সন্ধ্যায় তাকে ফের ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। ওই সময় আসলাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘আসলামকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হয়েছিল।’

জানা গেছে, আসলামের স্ত্রী ও শ্বশুর গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্তও ডিবি হেফাজতে ছিল। এ কারণে তার পরিবারের লোকজনও আতঙ্কে রয়েছে। 

জানা যায়, ২৪ এপ্রিল রাজধানীর শাহআলী এলাকা থেকে নিয়ামুল অপহৃত হন। নিয়ামুলের মুক্তিপণ বাবদ মোবাইল ফোনে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় মুক্তিপণ দাবিকারী হিসেবে আসলামকে শনাক্ত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার গাজীপুর থেকে আটক করা হয় আসলাম, তার স্ত্রী রিপা ও শ্বশুর আলালকে। আসলাম অপহৃত যুবকের চাচাতো বোনের স্বামী। নিয়ামুল অপহরণের পর আসলামকেই সন্দেহ করে তার স্বজনরা। আসলামকে নিয়ামুল অপহরণ মামলায় আসামি করে মামলা করা হতে পারে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর