শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষাবঞ্চিত চা শ্রমিকের সন্তানরা

২২ বাগানের মধ্যে পাঁচটিতেই নেই স্কুল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ছোট্ট একটি কক্ষ। পাশাপাশি বেঞ্চে বসে আছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১৪ শিক্ষার্থী। একসঙ্গে সবাইকে পাঠদান করছেন একজন শিক্ষক। এই চিত্র সিলেটের ছড়াগাঙ চা-বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ চিত্রপট শুধু ওই বিদ্যালয়েরই নয়, এমন নাজুক চিত্র সিলেটের সব চা-বাগানেই। প্রত্যেক বাগানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখনো পাঁচটি বাগানে কোনো স্কুলই প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যাপ্ত স্কুল ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটের চা শ্রমিকদের সন্তানরা। জেলার ২২ বাগানের মধ্যে ৫টিতেই নেই কোনো স্কুল। আর যেসব বাগানে স্কুল আছে, মনিটরিংয়ের অভাবে সেগুলোর অবস্থাও নাজুক।

চা-বাগান এলাকায় থাকা বেশিরভাগ স্কুলেই নেই পর্যাপ্ত ক্লাস রুম ও আসবাবপত্র। অনেক স্কুলেই একটি কক্ষে গাদাগাদি করে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান শিক্ষক। বেশিরভাগ স্কুলেই রয়েছে শিক্ষক সংকটও। উপযুক্ত সম্মানীর অভাব এবং বাগান এলাকায় জীবনযাপনের অবস্থা নিম্নমানের হওয়ায় সেখানে যেতে অনীহা থাকে বাইরের শিক্ষকদের। সব মিলিয়ে পড়ালেখার পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় চা-শ্রমিকদের মতো বঞ্চনার শিকার হচ্ছে তাদের সন্তানরাও।

চা-শ্রমিকরা জানান, বাগানে ভালো মানের স্কুল না থাকায় তাদের সন্তানরা পড়ালেখায় পিছিয়েই আছে। নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়েই বাগানের নিম্নমানের স্কুলে সন্তানদের পাঠান তারা। চা-শ্রমিক রামভজন বলেন, আমরা দিনে যা রোজগার করি, তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বাঁচি। সন্তানদের বাগানের বাইরে ভালো স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। আরেক শ্রমিক সরস্বতী দেবী বলেন, আমাদের বেতন দিনে মাত্র ৮৫ টাকা। এ টাকা দিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর। তারপরও আমরা সন্তানদের বাগানের স্কুলে পাঠাচ্ছি। কিন্তু স্কুলের অবস্থাও খারাপ।

চা-শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক হৃদেশ মোদী বলেন, চা-বাগানের স্কুলগুলোতে যারা শিক্ষাদান করেন, সেসব শিক্ষকের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সিলেটের বুরজান ও ফুলতলা চা-বাগানের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সবুর খান বলেন, আমরা চাই চা-শ্রমিকদের সন্তানরা পড়ালেখা করুক, স্কুলে আসুক। সে ব্যাপারে আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর