শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছয় বিভাগে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষ সংকট

মর্তুজা নুর, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নতুন ছয়টি বিভাগ পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলেও হয়নি প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ। বিভাগগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ শিক্ষক সংকট। আর শিক্ষার্থীরাও  হারিয়ে ফেলছে পড়াশোনার আগ্রহ। ল্যাব কিংবা সেমিনার সুবিধা ছাড়াই একেকটি বর্ষ পার করছে তারা। এতে বিভাগগুলোয় পড়াশোনার মান নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগটি দুজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে চলছে। অথচ রুটিনে দিনে সর্বোচ্চ ১২টি ক্লাস রয়েছে। মাঝেমধ্যে শিক্ষকের অসুস্থতা, অনুপস্থিতি, ক্লাস না নেওয়া ইত্যাদি কারণে কোনো দিন একটি ক্লাসও হয় না। গত বছরের নভেম্বরে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলেও এখনো পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে পারেনি বিভাগটি। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বিভাগের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ব্যাংকিং ও ইন্সু্যুরেন্স বিভাগ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ খোলা হয়। দুটি বিভাগে ব্যাচ আটটি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮২ জন। আর শিক্ষক আছেন মাত্র সাতজন। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে আইন অনুষদের অধীনে খোলা আইন ও ভূমি প্রশাসন, জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের অধীন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান এবং প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ খোলা হয়। এ বিভাগগুলোয় মোট ব্যাচ ১২টি। শিক্ষার্থী ৪২০ জন এবং শিক্ষক ১১ জন। হিসাব অনুযায়ী, ছয়টি বিভাগে মোট ২০টি ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০২ জন। আর শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ১৮।

 যেখানে প্রতি ৪৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক একজন।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ১৭ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকবেন। সেই হিসাবে রাবির ওই ছয়টি বিভাগে ৮৯ শতাংশ কম শিক্ষক রয়েছেন।

জানা গেছে, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাবরেটরি নেই, অন্যান্য বিভাগেও সেমিনার সুবিধা পাওয়া যায় না। মেকআপ ক্লাসের ভারে তারা অতিষ্ঠ। অথচ এই পরিস্থিতির মধ্যেও সান্ধ্য কোর্স চালুর জন্য বারবার আবেদন করছে ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ।

চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. তরুণ হাসান বলেন, বিভাগে অন্তত ১৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন। সেখানে তিনজন স্থায়ী ও ছয়জন অস্থায়ী শিক্ষক দিয়ে চলছে। তাছাড়া তিন ব্যাচের জন্য শ্রেণিকক্ষ আছে দুটি। ক্লাস পরীক্ষা নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।

এদিকে সব জেনেশুনেও ‘ব্যবসা ও বাণিজ্য আইন’ নামে আরেকটি বিভাগ খুলতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ বছরই কার্যক্রম শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী বলেন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের কথা জানালে ইউজিসি প্রথমে নির্দিষ্ট সংখ্যক নিয়োগের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়। এখন ইউজিসির পরিবর্তিত নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে আবারও তাদের অনুমতি লাগবে।

সর্বশেষ খবর