রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুদক কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা

হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

মোস্তফা কাজল

দুদক কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা সেজে মানুষকে ধাপ্পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। চক্রের সদস্যরা কখনো দুদকের উপপরিচালক, কখনো মহাপরিচালক, কখনো সচিব পরিচয় দিয়ে বড় বড় সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ‘অনুসন্ধান’ করছে। নোটিস দিয়ে সম্পদের হিসাব বিবরণী তলব করছে। আবার টাকার বিনিময়ে কল্পিত অভিযোগ থেকে অব?্যাহতিও দিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাই দুদকের কোনো চিঠি বা নোটিস পেলে তা সত্য কিনা যাচাই করার জন্য দুদকের হটলাইন সেবা ১০৬ মোবাইলে ফোন করতে বলা হয়েছে।

ভুয়া দুদকচক্রের অস্তিত্ব আগেও ছিল। তবে বর্তমান কমিশনের চলমান গ্রেফতার অভিযান জোরদার হওয়ার পর থেকে তারা এখন বেশি সক্রিয়। মাঝেমধ্যেই এই প্রতারক চক্রের ভুয়া দুদক কর্মকর্তা ধরা পড়ছে। গত মার্চ মাসে প্রতারক চক্রের বেশ কিছু চাতুরির ঘটনা দুদকের নজরে এসেছে। এরপর দুদক অনুরোধ জানায় যে, দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে কেউ অনৈতিক সুবিধা দাবি করলে তা যেন দুদক পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন) মীর মো. জয়নুল আবেদিন শিবলীকে অবহিত করা হয়।

প্রতারণা : সূত্র জানায়, গণপূর্ত বিভাগ, বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর গত মার্চ মাসে একটি চিঠির কপি পান। তাতে দেখা যায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য সম্পদের বিবরণী চেয়ে দুদক একটি ‘অফিস আদেশ’ জারি করেছে। চিঠিতে দুদকের লোগো ছাপানো। এই নোটিসের কপি পাঠানোর পাশাপাশি ওই প্রকৌশলীকে ফোনও করে প্রতারক চক্র। দেখা যায়, ২৭ মার্চ ওই আদেশে সই করেছেন দুদক উপ-পরিচালক জহিরুল আলম। কিন্তু এই নামে কোনো উপপরিচালক দুদকে নেই।

প্রায় একই প্রক্রিয়ায় গণপূর্ত অধিদফতরের পেকু সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফিরোজ হাসানকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে দুদক অভিযোগ করে যে, প্রকৌশলী হাসান জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অনেক সম্পদ অর্জন করেছেন। তাই তাকে দুদকের কাছে হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হবে। নিচে সই করেছেন দুদকের উপপরিচালক আবুল হোসেন। কিন্তু এই নামে দুদকে কোনো উপপরিচালক নেই।

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্প ও হাসপাতাল ২৫০ হতে ৫০০ শয?্যায় উন্নতীকরণ প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী খানকে ১৯ মার্চ পাঠানো চিঠিতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে ‘অব?্যাহতি’ দেওয়া হয়। অব্যাহতির আদেশে স্বাক্ষরকারী হিসেবে দুদক সচিব শামসুল আরেফিনের নাম ব্যবহার করেছে প্রতারকচক্র। অথচ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী খানের বিরুদ্ধে দুদক কোনো অনুসন্ধানই চালায়নি। দুদকের ধারণা, ভুয়া আদেশকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতানোর জন্য চিঠিতে দুদকের বড় বড় কর্তাদের নাম বসিয়ে দিচ্ছে। গত ১২ মার্চ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী খানের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিল করে নোটিস জারি করা হয়। এটা ছিল ভুয়া নোটিস। নোটিসে সই দেখা যায় দুদক উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। এই নামটিও ভুয়া। দুদকে এই নামেও কোনো উপপরিচালক নেই।

দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, একাধিক সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বা টেলিফোনের মাধ্যমে কাল্পনিক অভিযোগ অথবা কমিশনের বিবেচনাধীন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ও নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের কাছে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দাবি করে থাকে। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতারকচক্রের তৎপরতার ব্যাপারে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন লিখিত আদেশে এ বিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করেছেন।

দুদকের নির্দশনা অনুযায়ী অনুসন্ধানকারী বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সাক্ষী ও আসামিদের লিখিত চিঠি দিয়ে থাকেন। দুদকের কর্মকর্তাদের কারও সঙ্গে মোবাইলফোন,  টেলিফোন, ই-মেইল বা ব্যক্তিগুভাবে যোগযোগ নিষিদ্ধ। তাই কমিশন প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

সর্বশেষ খবর