সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানজুড়েই গ্যাস সংকট

ঘাটতি ৩৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট

জিন্নাতুন নূর

গ্যাস সংকটের জন্য এবার রমজান মাসজুড়েই গ্রাহকদের ভুগতে হবে। আর ঈদের আগেও গ্যাস সংকট সমাধানের আশ্বাস দিতে পারছে না জ্বালানি বিভাগ। গ্যাসের সংকট দূর করতে এ মাসের শেষদিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা থাকলেও এলএনজি সরবরাহের পাইপলাইনে ত্রুটি থাকায় চলতি মাসেও তা সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আসছে ২৬ মে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু পাইপে ছিদ্র থাকায় পিছিয়ে গেছে এলএনজির সরবরাহ। এতে গ্রাহকদের আরও কিছুদিন গ্যাস সংকটের ভোগান্তি সহ্য করতে হবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলএনজি সরবরাহ করতে যে পাইপ নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে ত্রুটি দেখা গেছে। আর সাগর উত্তাল থাকায় বর্তমানে সেই পাইপটি মেরামত করতে সময় লাগছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য আশা করছেন, আগামী জুনেই পাইপের ত্রুটি ঠিক করে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে জুনের আগে এলএনজি সরবরাহ করার কোনো আশা আর দেখা যাচ্ছে না।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় বর্তমানে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে এই সংকট কাটবে। কিন্তু এর আগে এপ্রিলের ২৩ তারিখে এলএনজি বহনকারী জাহাজটি বাংলাদেশের সীমানায় এসে পৌঁছায় এবং ইতিমধ্যে দুইবার পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ করার জন্য চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ গ্যাস সরবরাহ করলেই পাইপের মাঝের সংযোগ খুলে যাচ্ছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মসিউর রহমান বলেন, রমজানে ইফতার তৈরির জন্য গ্রাহকরা অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে গ্যাসের চাহিদার তুলনায় বর্তমানে সরবরাহও কম। তিনি বলেন, এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে এই সংকট কমে যাবে।

বর্তমানে প্রতিদিন তিতাস গ্যাসের অধিভূক্ত এলাকায় গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফিট। আর তিতাসের বিতরণ ক্ষমতা মাত্র এক হাজার ৬৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট। অর্থাৎ ৩৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের ঘাটতি আছে। অন্যদিকে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বর্তমানে তাদের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে আর সারা দেশে গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট।

গ্যাসের অভাবে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, ইব্রাহিমপুর, গোপীবাগ, ইস্কাটন, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, আনসার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শ্যামলীর এক গৃহিণী রুমি আক্তার জানান, দিনে গ্যাসের চাপ থাকে না বললেই চলে। রাতের দিকে গ্যাসের চাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাত জেগে সাহরির জন্য খাবার প্রস্তুত করলেও দিনে গ্যাস না থাকায় ইফতার তৈরি করতে পারেন না এই গৃহিণী। ফলে বাইরে থেকেই তাকে এবং তার পরিবারকে ইফতার এনে খেতে হচ্ছে। মিরপুর ১২ নম্বরের আরেক গৃহিণী সুমি আক্তার বলেন, গ্যাস না পাওয়ায় এখন কোরেসিনের চুলা ও রাইস কুকারে রান্নাবান্নার কাজ করছি। রান্নায় সমস্যা হওয়ায় এখন পর্যন্ত আত্মীয়স্বজনকে ইফতারের দাওয়াত দিতে পারিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার ঈদের সময়ও মেহমানদারি করতে পারব কিনা সন্দেহ আছে। যদিও বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। তারপরও চাহিদা অনুপাতে গ্যাসের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমজানে সিএনজি গ্যাস স্টেশনও ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে। তারপরও গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর