মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঈদে ট্রেনে বাড়ি ফেরা

অগ্রিম টিকিট পেতে স্টেশনে দীর্ঘ লাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ঈদ সামনে রেখে টানা তিন দিন চট্টগ্রামে তেমন ভিড় দেখা না গেলেও চতুর্থ দিনে গতকাল বিভিন্ন কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কেনার দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আগের দিন রাতে এসেও অনেকেই অগ্রিম টিকিট পাননি। বিশেষ করে তূর্ণানিশিতা, বিজয়, চট্টলা এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও সুবর্ণ কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন নজরে পড়েছে। প্রায় ৫ ঘণ্টার মধ্যেই বেশির ভাগ ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। গতকাল ১৩ জুনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের দুটি স্পেশাল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। সকাল ১০টায় জাহেদ নামের তূর্ণানিশিতার এক অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। অনেক কষ্ট করেই কাউন্টারের সামনে এসেছি। পেছনে অনেক যাত্রী টিকিটের অপেক্ষায়। কাউন্টারে দেখা যাচ্ছে আর মাত্র ৩৫টি টিকিট আছে। এরই মধ্যে আমার দুটি টিকিট নিতে পারলাম। তবে আমি টিকিট পেয়ে অনেক খুশি। বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে ঈদ করব, সেটাই বড় আনন্দ। সোনার বাংলার আজম নামের এক যাত্রী বললেন, আগের দিন টাকা দিয়ে একজন লোক লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় এসে টিকিট সংগ্রহ করেছি। ক্ষোভের সঙ্গে বিজয় ট্রেনের যাত্রী মোস্তফা ইউসূফ বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে থেকে কাউন্টারে এসে দেখলাম টিকিট নেই। প্রায় ২ ঘণ্টা পরই এমন হতাশার কথা শুনে মনের মধ্যে অনেক কষ্ট লেগেছে। আমার মতো অনেক যাত্রী টিকিট নিতে পারেননি।

 তবে এখন কোনো কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট কেনার চেষ্টা করছি। তা না হলে বাড়ি যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

কবির নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে চাঁদপুরের চারটি টিকিট হাতে বেরিয়ে আসি। রাতভর যে কষ্ট করেছি সার্থক হয়েছে। কামাল উদ্দিন নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বলেন, বোন, দুলাভাই, ভাবি ও আমার জন্য চারটি টিকিট কিনেছি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ (গতকাল) ১২টি ট্রেনের ৯ হাজার ৫২২টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬৩৬টি। স্পেশাল ট্রেন দুটিতে টিকিট আছে ৮৯০টি। ১০টি নিয়মিত ট্রেনে ১৬টি এক্সট্রা বগি যুক্ত করেই টিকিট ছাড়া হয়েছে। শুক্র, শনি ও রবিবার যথাক্রমে ৬৫, ৭৫ ও ৮০ শতাংশ ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ঈদ সামনে রেখে ১০টি ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলমান রয়েছে। এসব ট্রেনে টিকিট আছে ৬ হাজার ৯৩৭টি। এর মধ্যে কাউন্টারে পাওয়া যাবে ৬৫ শতাংশ ও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ। অন্য ৫ শতাংশ ভিআইপি ও স্টাফ কোটায় ৫ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন বািকল ৫টা পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম চলবে। প্রতি বছরের মতো চট্টগ্রাম থেকে এবারও আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ, তূর্ণা, গোধূলি, মেঘনা, মহানগর, সোনার বাংলা, পাহাড়িকা, উদয়ন ও বিজয় এবং চট্টলা এক্সপ্রেস দেশের বিভিন্ন প্র?ান্তের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এবারও ঈদে যথারীতি ১১-১৫ জুনের ট্রেনে টিকিটের চাহিদার ওপর নির্ভর করে এক্সট্রা বগি লাগানো হবে। স্লিপার হলে ১৮টি, এসি চেয়ার হলে ৫৫টি ও শোভন চেয়ার হলে ৬০ সিট থাকবে প্রতি বগিতে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। একজন যাত্রী একাধিক ট্রেনের ও ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির টিকিট নিতে পারবেন না। অগ্রিম টিকিট ফেরতযোগ্য নয়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ট্রেনে আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে না। অন্য ট্রেনগুলোয় যাত্রার দিন যাত্রীর অনুরোধে আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে। দেওয়া হবে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনও। ট্রেনগুলোর মধ্যে আছে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল চলবে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, চাঁদপুর স্পেশাল-১ চলবে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর স্পেশাল-২ চলবে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, রাজশাহী স্পেশাল চলবে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, পার্বতীপুর স্পেশাল চলবে পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর রুটে। সব বিশেষ ট্রেন ঈদের আগে ১৩, ১৪ ও ১৫ জুন ও ঈদের পর ১৮ থেকে ২৪ জুন চলাচল করবে। এ ছাড়া শোলাকিয়া বিশেষ ট্রেন-১ চলবে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ও শোলাকিয়া বিশেষ ট্রেন-২ চলবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচ দিন আগে ১১ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।

সর্বশেষ খবর