বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেউ শোনে না কারও কথা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীতা চরমে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্রের আলোকে ১১ সেবা সংস্থার সঙ্গে রবিবার সমন্বয় সভার আয়োজন করে। সভার এক নম্বর এজেন্ডা ছিল ‘চউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বিষয়ক’। কিন্তু বৈঠকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান বা তার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২১ জুন নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়ও জলাবদ্ধতা ইস্যু নিয়ে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এভাবে চসিক-চউকের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। বাড়ছে উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতা। বাড়ছে নগরবাসীর ভোগান্তি। তদুপরি চউক চট্টগ্রাম নগরের অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’ ইস্যু জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে। অন্যদিকে চসিক নগরের খাল-নালা সংস্কার করে। এমন অবস্থায় দুই প্রধান সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি হলেও তাদের অবস্থান বিপরীতমুখী বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই সংস্থার দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ নিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন রবিবার বলেন, ‘সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য। সভায় সংস্থার প্রধানদের উপস্থিতি জরুরি। বর্তমানে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কার্যক্ষেত্রটি চসিক এলাকায়। তাই এখানে চসিকের দায়বদ্ধতা আছে। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা, বর্ষায় কী কী কাজ শেষ হবে, প্রকল্পের বাকি কাজগুলো কীভাবে সম্পন্ন হবে, কত দিনের মধ্যে হবে— এসব আমাদের জানা প্রয়োজন। কিন্তু সমন্বয় সভায় চউকের কেউ উপস্থিত না থাকায় বিষয়টি আমরা নগরবাসীকে জানাতে পারিনি।’ এ ব্যাপারে চউকের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জানা যায়, প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে সিটি করপোরেশন নগরের খাল, ড্রেন ও নালা সংস্কার করে। এ বছরও সংস্থাটি কাজ শুরু করে। কিন্তু ২০ মার্চ চসিক ঘোষণা করে, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় চসিক এ বছর খাল খনন করবে না।’ তাই এবার অতীতের মতো খাল, মাটি ও ড্রেন সংস্কার করেনি। ভরাট হয়ে গেছে পানি চলাচলের এসব মাধ্যম। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ। এমতাবস্থায় নগরবাসীর শঙ্কা, বর্ষা মৌসুমে নগরে অতীতের চেয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা হবে। তদুপরি বর্ষা শুরুর আগে থেকেই নগরবাসী একাধিকবার জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছেন। চসিক-চউকের সমন্বয়হীনতায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। জানা যায়, নিয়ম মতে চসিক ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ৫৭ খালকে ছয় জোনে ভাগ করে খননকাজ শুরু করে। চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, হিজাড়া খাল, শিতল ঝরনা খাল, ত্রিপুরা খাল, মির্জা খাল, নয়া মির্জা খালে দৈনিক প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক কাজ করে। খননকাজে ছিল ২০টি এস্কেবেটর। চসিকের খরচ হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। কিন্তু পরে চউক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি এলে দ্বৈত কাজ হওয়ায় চসিক মাটি খননকাজ বন্ধ করে। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরে ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের ৫৭টি খাল ও ১ হাজার ৬০৫ কিলোমিটার ড্রেন আছে। নগরের পানি এসব ড্রেন-খাল হয়ে নদীতে পড়ে। কিন্তু এখন নগরের ড্রেন ও খালগুলোর অবস্থা চরম বেহাল। খাল, নালা ও ড্রেনগুলো বর্জ্যে ভরাট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর