শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য বিভাগের হ্যাঁ ওয়াসার না

পানিবাহিত রোগ নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম, দায় নিচ্ছে না কেউ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

স্বাস্থ্য বিভাগের হ্যাঁ ওয়াসার না

চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া পানিবাহিত জন্ডিস (হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস) নিয়ে সিভিল সার্জন ও ওয়াসা বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, ‘ওয়াসার পানিতে সমস্যা আছে। তাই জন্ডিসে আক্রান্তের হার বাড়ছে।’ অন্যদিকে ওয়াসা বলছে, ‘তাদের পানিতে কোনো জীবাণু নেই। জলাবদ্ধতা ও পানির ট্যাংক অপরিষ্কারের কারণে এমনটি হয়েছে।’ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থা বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর তথ্য চাওয়ার পর গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত ২১৮ জন জন্ডিস আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯৬ জন। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে সমস্যা আছে। সমস্যা না থাকলে ওই এলাকার মানুষ কেন জন্ডিস ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করি, গণমাধ্যমের কাছে পানিতে জীবাণু নেই দাবি না করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকা এবং কোথায় লিক আছে তা বের করে প্রকৃত চিত্র দেখা উচিত ওয়াসার।’ তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি রিপোর্টে দেখা যায়, হালিশহরের পাঁচটি স্থান থেকে সংগ্রহ করা পাঁচটি পানির স্যাম্পলের কোনোটিতেই ক্ষতিকর এবং পানিবাহিত রোগের জন্য দায়ী মোট কোলিফর্ম বাসিলি এবং মোট ফেসাল টাইপ কোলিফর্ম পাওয়া যায়নি। শুধু একটি স্যাম্পলে অ্যারোবিক প্লট কাউন্ট (এপিসি) মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি কিংবা হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের জন্য দায়ী নয়। তাই ওয়াসার পানি ক্ষতিকর তা বলা যাবে না।’ স্বাস্থ্য বিভাগ ও ওয়াসার অভিযোগ, হালিশহর এলাকায় যত্রতত্র খোলা খাবার বিক্রি হয়, এসব খায় স্থানীয়রা। এর সঙ্গে আছে বছরের পর বছর ধরে পানির ট্যাংক পরিষ্কার না করা। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় অধিকাংশ এলাকা। এ সময় টয়লেট আর খাবার পানি একাকার হয়ে যায়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হলেও এসব বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে সংস্থা দুটি মনে করছে। এদিকে হালিশহরে পানিবাহিত রোগে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিটি মেয়রের নির্দেশে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে আহ্বায়ক, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির ও ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ইফতেখারুল্লাহ মামুনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি সংগ্রহ করে মেয়র বরাবর রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর