রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিনি দিয়ে পেনশনের টাকা শোধ!

চলছে ছিনিমিনি

ঝর্ণা মনি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার মতোই কথা রাখেনি সরকারি চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএফএফআইসি)। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে সংস্থাটির কর্মীরা বাড়ি ফিরছেন পেনশনের টাকার বদলে চিনির বস্তা হাতে। সেই চিনি বিক্রি করে পেনশনের পাওনা টাকা তুলতে হচ্ছে তাদের। রাজশাহী সুগার মিলে ৩৩ বছর চাকরি করেছেন সেন্টার ইনচার্জ এস কে মো. রোস্তম আলী। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে তাকে গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ ছাড়াই শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এক বছর ঘুরিয়ে গ্রাচ্যুইটির ১৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিপরীতে চিনির বস্তা দেওয়া হয় তাকে।

জানা গেছে, গত ছয়-সাত বছরে বিএফএফআইসির অধীন দেশের ১৫টি চিনিকলের অবসরে যাওয়া কর্মজীবীরা কেউই পেনশন পাচ্ছেন না। কারণ, চিনি বিক্রি হচ্ছে না, হেড অফিসে বরাদ্দ নেই— এমন বক্তব্য কর্মকর্তাদের। পরে টাকার বদলে চিনির বস্তা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য চিনি নিয়েও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চিনির দামের ওপর শতকরা ৫ ভাগ কমিশন নেওয়াসহ রয়েছে নানা শর্ত। এ ব্যাপারে এস কে মো. রোস্তম আলী বলেন, ‘দেড় বছর আগে অবসরে যাই। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেতাম ৬ লাখ। ঢাকায় হেড অফিসে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি চারবার। তিনি এমডিকে ফোন করেন। চারবারে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। করপোরেশন ঘোষণা দিয়েছে টাকার বিনিময়ে চিনি নিতে। সবার সঙ্গে আমিও রাজি হই। কমিশন দিয়ে ১১ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাই।’ তিনি বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায়, ফান্ড নেই। এত বছর চাকরি করার ফল এই!’ টাকার বদলে চিনি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিএফএফআইসির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক। চিনি বিক্রি হচ্ছে না। এজন্য টাকা দিতে পারছি না। কারণ, চিনি বিক্রির ওপর সবকিছু নির্ভর করে। বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়েছি। আশা করছি, সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া চিনিশিল্পের সুদিন আনতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি।’ শুধু চিনিশিল্পেই নয়, একই অবস্থা চলছে দেশের আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডেও (বিআরডিবি)। পেনশনের সময় খালি হাতেই বাড়ি যাচ্ছেন কর্মীরা। অথচ তাদের সব টাকা এফডিআর করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিআরডিবির সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর এস এম রহমত উল্লাহ অবসরে গেছেন দেড় বছর আগে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পেনশনের টাকা তুলেছেন গত ঈদের আগে। আরেক কর্মকর্তা আবদুল হামিদ সরকার জানিয়েছেন, অবসরে যাওয়ার আট মাস পরও টাকা পাননি। জানতে চাইলে বিআরডিবির মহাপরিচালক মুহম্মদ মউদুদুর রহমান সফদার বলেন, ‘এটি সময়সাপেক্ষ ও বাজেটসাপেক্ষ ব্যাপার।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছয় মাসে অবসরপ্রাপ্তদের তালিকা ধরে দুই দফায় ৪৪ কোটি টাকার ওপরে পেনশন, গ্রাচ্যুইটি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এফডিআরের টাকা ভেঙে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, দরিদ্রদের উন্নয়নকাজের জন্য নিজস্ব তহবিল প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর