শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন করে তথ্য তলবে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা

ভাতা ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে

নিজামুল হক বিপুল

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে দেওয়ার জন্য তাদের কাছে তথ্য চেয়ে দীর্ঘ একটি ফরম পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, এ ফরমে যে তথ্যভুক্তি করা হবে সেগুলো আবার সিডি করে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট এবং বিরক্ত। তারা বলছেন, ভাতা দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ১০ বার তাদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরপর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ভাতা নিতে গিয়ে তিন মাস অন্তর অন্তর অনেক ঝক্কি-ঝামেলা অতিক্রম করতে হয়। এগুলো করতে করতে পেরেশানি অবস্থা। এখন আবার নতুন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন— গ্রাম পর্যায়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তারা কি চাইলেই হাতের কাছে সিডি করার সুবিধা পাবেন? তাদের পক্ষে ইচ্ছা করলেই অনলাইনে ফরম পূরণ সম্ভব নয়। কারণ বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই দরিদ্র ও লেখাপড়ায় অনগ্রসর।

নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান মিজান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নতুন করে পাঁচ পৃষ্ঠার ফরম ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নতুন করে তথ্য চাওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত তাদের আরেক দফা হয়রানি করা হচ্ছে। এটা তো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক ব্যাপার। ভাতা ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে দেওয়ার জন্য যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সবই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে রয়েছে। তার পরও নতুন করে ফরম, সিডির আয়োজনটা রহস্যময়।

মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেছেন, এখন যে পদ্ধতিতে তাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে তাতে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। ভাতার টাকা তিন মাস পরপর দিলেও এ টাকা নেওয়ার জন্য একবার ইউএনও অফিস, একবার ডিসি অফিস, আবার এজি অফিস— এভাবে অন্তত পাঁচটি জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়, যা সহজ-সরল ও দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কষ্টকর ও অপমানের ব্যাপার। তারা বলেন, সব যাচাই-বাছাই শেষে এজি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স যাওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংক থেকে টাকা ট্রান্সফার করা হয় সোনালী ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে। এরপর টাকা তোলা সম্ভব হয়। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, তারা সহজে          ভাতার টাকা পেতে চান। বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করে ভাতা নেওয়া ক্লান্তিকর ব্যাপার। তাই ই-পেমেন্টের ব্যবস্থা হলে তারা উপকৃতই হবেন। ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা সলিমউল্লাহ বলেন, জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দৌড়ঝাঁপ মুক্তিযোদ্ধাদের সইছে না। ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে ভাতা দিলে আমরা উপকৃতই হব। কিন্তু এ উপকার পাওয়ার জন্য নাকে খত দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে হবে! মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’র আহ্বায়ক লেখক-গবেষক আবির আহাদ বলেন, মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বিকৃত আনন্দ উপভোগ করার জন্য বার বার নানা ছলছুতায় মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করে। পাঁচ পৃষ্ঠার এই ফরমের তামাশাটাও তা-ই। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যখন আছেই, তখন নতুন তথ্য চাওয়ার ফাজলামো কেন? মন্ত্রণালয় তো ওসব তথ্যই ই-পদ্ধতির জন্য ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানিমুক্ত করতে পারে। এ মন্ত্রণালয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার লক্ষ্যেই করা। সেবাই যদি না করবে তাহলে তারা করবেটা কী?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর