বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানি লন্ডারিং মামলার জালে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এলো সাপ

মাহবুব মমতাজী

মানি লন্ডারিং আইনের জালে ধরা পড়ছেন শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রামের এক মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তদন্তেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার বিস্ময়কর এ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ওই মাদক ব্যবসায়ীর একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও একটিতেই লেনদেন হয়েছে শত কোটি টাকার বেশি। তার সঙ্গে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা ও গাজীপুরের বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ১৪টি শাখা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোয়।

জানা গেছে, ১১ জুলাই চট্টগ্রামের নিজ বাসা থেকে মাহমুদুল হাসান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তার গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহায়তায় তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের ইয়াবাসম্রাট জাহিদুল ইসলাম আলো ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আলোর মৃত্যুর পর তার ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মেলে। এ তদন্তেই বেরিয়ে আসে মাহমুদুল হাসানের নাম। গ্রেফতারের পরই মাহমুদের অন্তত ৭টি অ্যাকাউন্টে ১৩ কোটি টাকার বেশি পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টগুলো খোলার সময় তিনি এম এম করপোরেশন নামে একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করেন। অথচ এই কোম্পানির ব্যবসা বা ঠিকানার হদিস পাননি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন। গ্রেফতারের কয়েক দিন আগেও মাহমুদের অ্যাকাউন্টে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, সাভার, বারিধারা, টঙ্গী ও বগুড়া থেকে লেনদেন হয়। এসব লেনদেনের সূত্র ধরে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী মানি লন্ডারিং মামলার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানায় তদন্ত সূত্র। উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন জানান, ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি স্টেটমেন্ট চাওয়া হয়েছে। স্টেটমেন্ট পেলে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বলা যাবে। জানা যায়, মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। মাহমুদ জানান, মাদক ব্যবসায় সরাসরি তিনি জড়িত নন। আলোসহ বিভিন্ন ব্যক্তি মাদকের টাকা লেনদেনে তার অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করেছেন। বিনিময়ে তিনি কমিশন নিয়েছেন। তার তথ্যানুযায়ী আরও ১০টি মামলার প্রস্তুতি চলছে। অন্য একটি মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অন্তত ৩১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। কক্সবাজারের আজহার মিয়া ও তার দুই ছেলে নুরুল হক ভুট্টো ও নূর মোহাম্মদের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে আটজন মাদক ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্য হলেন জালাল উদ্দিন, বেলাল উদ্দিন, আবছার উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন এবং হোসেন ওরফে কামাল উদ্দিন। সারা দেশে ইয়াবা পাঠাতেন তারা। সিআইডি সূত্র জানায়, ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে তাদের রয়েছে সাব-সিন্ডিকেট। ব্যাংকের হিসাব ছাড়াও ‘বিকাশ’ ও ‘রকেট’ ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

 সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং আইনের মামলাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে মূল হোতাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাজিরপাড়ায় ২০০৮ সালে নুরুল হক ভুট্টো ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার বাবা ও ভাই যুক্ত হন। চারটি ব্যাংকের আটটি অ্যাকাউন্টে দুই ভাই ও তাদের বাবার নামে ছয় বছরে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩২৯ টাকা জমা হয়। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এর বাইরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শতাধিক বিকাশ ও রকেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও ইয়াবার টাকা জমা পড়ে। বাপ-ছেলের ইয়াবা সিন্ডিকেটে যুক্ত করা হয় ভুট্টোর বোনের পাঁচ ছেলেকেও।

সর্বশেষ খবর