সুষ্ঠুভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা থাকলেও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ভোটের সময় চাইছেন সেনাবাহিনী। তাদের ভাষ্য, বহিরাগত সন্ত্রাসীমুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন দরকার। কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থীও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন।
গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরীর পলাশপুর ব্রিজ এলাকা থেকে ১১তম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। এ সময় তিনি লিফলেট বিতরণ করে পরিকল্পিত নগরী গড়তে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীতে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। তাদের কারণে ভোটের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। তিনি বহিরাগত ও সন্ত্রাসীমুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণের আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন। তার মতে, সেনাবাহিনী থাকলে মানুষের শঙ্কা দূর হবে এবং কেউ কারচুপি-জালিয়াতি করতে পারবে না। ‘বরিশালে গভীরভাবে কিছু রহস্য লুকায়িত আছে’ বলে দাবি করেন সরোয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসনিকভাবে তার দলের অনেক কাউন্সিলকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই বিএনপি ধৈর্য ধারণ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় একই সময় নগরীর কেডিসি বালুরমাঠ বস্তিতে গণসংযোগ করে লিফলেট বিতরণ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনিও বরিশাল নগরীর পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাপস বলেন, বরিশালের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে একটি বিশেষ দলের পক্ষে বহিরাগতরা এসে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েছে। তিনি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আগামী দুই দিনের মধ্যে বরিশাল নগরী থেকে সব বহিরাগত বিতাড়িত করাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন।এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর পলাশপুর এলাকায় কাস্তে প্রতীকের সমর্থনে লিফলেট বিতরণসহ গণসংযোগ করেন কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ। এ সময় সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত বরিশাল নগরী গড়তে ৩০ জুলাই কাস্তে প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে দুপুর ১টার দিকে নগরীর কালীবাড়ি রোডের সমাজসেবা কার্যালয় এলাকায় গণসংযোগসহ লিফলেট বিতরণ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৩০ জুলাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। এ নির্বাচন হচ্ছে বরিশালবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের নির্বাচন। তাই কোনোভাবেই এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও জাপা প্রার্থীর ‘বহিরাগত বিতাড়িত করা’সহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাদিক বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে বরিশালে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন আছে তাহলে তারা সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কোনো অবজেকশন (আপত্তি) নেই। বরিশালে সেনাবাহিনী মোতায়েনের মতো কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কিনা— সাদিক পাল্টা প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, বরিশালে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করতে এবং ভোটারদের মাঝে ভীতি ছড়াতেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলা হয়েছে। সাদিক বলেন, বরিশাল নগরীতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বসবাস করে। এখানে বসবাসকারী অন্যান্য এলাকার মানুষজন এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইলে এতে দোষের কিছু নেই।
সরোয়ার, সাদিক, তাপস, আজাদ ছাড়াও বাসদের ডা. মনিষা চক্রবর্তী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বশির আহম্মেদ ঝুনু গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।