স্বাস্থ্যসেবা খাতের নানা অনিয়ম-অসন্তোষ দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু করেছে অভিযান ও মনিটরিং। স্বাস্থ্য খাতে রোগীদের নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এ উদ্যোগ নেয় বলে জানা যায়।
জানা যায়, স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ, নানা অনিয়ম, রোগীদের খাবার সরবরাহে নয়-ছয় এবং সরকারি ওষুধ রোগীদের না দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৬ জুলাই ‘চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ এবং চিকিৎসা সেবা ও পথ্যের মানোন্নয়ন করণীয় প্রসঙ্গে’ শীর্ষক বার্তা সম্বলিত একটি সার্কুলার জারি করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) এবং লাইন ডাইরেক্টর (হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এ সার্কুলারে ৭টি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহকৃত পথ্যের গুণগতমান এবং পরিমাণ নিয়ে রোগীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। পথ্যের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে। বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।’ দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং এনফোর্সমেন্ট অভিযানের সমন্বয়কারী মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ পেলে দুদক তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে দুদক একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এটি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তাছাড়া ভুক্তভোগী যে কেউ দুদকের কল সেন্টার ‘১০৬’ এ সরাসরি অভিযোগ করতে পারবেন। স্বাস্থ্যসেবাসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে দুদকের বিশেষ টাস্কফোর্স নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দাতা কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খাবারের মান এবং পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ আসছে। তাই এ ব্যাপারে দুদক সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করছে।’
সিভিল এভিয়েশনে দুদকের আকস্মিক পরিদর্শন : সিভিল এভিয়েশনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আকস্মিক পরিদর্শন করেছে। গতকাল দুপুরে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম কুর্মিটোলাস্থ কার্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে যায়। সিভিল এভিয়েশনে যে কোনো ধরনের নির্মাণ ও মেরামত কাজের দরপত্র পেতে বেআইনিভাবে টাকা পরিশোধ করতে হয়। দুদক কলসেন্টারে (১০৬) ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ রকম অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম সিভিল এভিয়েশনের কার্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে যায়। দুদক উপ-পরিচালক হেলাল উদ্দিন শরিফের নেতৃত্বে একটি টিম দুপুরে কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম দুর্নীতিমুক্ত রাখার পরামর্শ দেন। দুদক টিমের উপস্থিতিতে সিভিল এভিয়েশনের চেয়াম্যান দফতরে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের কঠোর নির্দেশ দেন। এ সময় দুদকের পক্ষ থেকে উপস্থিত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে দুর্নীতিবিরোধী লিফলেট ও দুদক হটলাইনের (১০৬) স্টিকার বিতরণ করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের সমন্বয়কারী দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী জানান, দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সঠিক অভিযোগকে আমলে এনে দুদক সিভিল এভিয়েশনে টিম পাঠিয়েছে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।