শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

আট ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী নেই বিএনপির

বরিশাল

নিজামুল হক বিপুল, বরিশাল থেকে

সৈয়দ মো. জাকির হোসেন জেলাল। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর। তিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক। তার আরেক পরিচয় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সহোদর। বরিশাল সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনেও তিনি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। কিন্তু তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। জেলালের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করেননি তার দলীয় নেতা-কর্মী এবং ওয়ার্ডের ভোটাররা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মতে, নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ওই ওয়ার্ডে দলকে কবর দিয়েছেন জেলাল। তারা বলছেন, জেলাল নিজে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী।  তার ভাইও দলের কেন্দ্রীয় নেতা। অথচ তিনি নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে গোপন আঁতাত করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করে দিয়েছেন। কারণ তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে গতকাল জাকির হোসেন জেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এমনিতেই প্রত্যাহার করেছি। দীর্ঘদিন কাউন্সিলর ছিলাম। তাই এবার বাদ দিলাম। অন্য কোনো কারণ নেই। কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কোনো চাপ নেই।  শুধু ১৫ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের যে ওয়ার্ডে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের বাড়ি সেই ২ নম্বর ওয়ার্ডেও বিএনপি কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পারেনি। এই ওয়ার্ডটি গঠিত কাউনিয়া, বিসিকের একাংশ, কমিশনার সড়ক ও ব্রাঞ্চ রোডের একাংশ নিয়ে। এই দুই ওয়ার্ড ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনের আরও ছয়টি ওয়ার্ডে বিএনপির কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। এই ওয়ার্ডগুলো ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন বরিশাল মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি কামরুল হাসান রতন। তিনিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোশাররফ আলী খান বাদশা। বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই আটটি ওয়ার্ডে বিএনপির কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় এর খেসারত দিতে হবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলীয় মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারকে। কারণ দলের কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় এসব ওয়ার্ডের দলীয় এবং সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ হারাবেন। কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলে সাধারণত তারাই ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যান এবং যেতে উৎসাহিত করে থাকেন।

এ কারণেই সরোয়ার ভোটের হিসাবে বেশ পিছিয়ে গেছেন বলে মনে করছেন খোদ বিএনপি নেতা-কর্মীরাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বি এম কলেজ ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অনেক কারণে পিছিয়ে আছে। এর অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের আটটি ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকা। ওই নেতা বলেন, এর বাইরেও আরও অনেকগুলো দুর্বলতা আছে বরিশাল বিএনপির। এখন পর্যন্ত দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটেনি।  এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। নেতাদের ওপর এমন ক্ষোভ অসন্তোষ থাকে। তবে নির্বাচনের সময় আমরা সবাই এক। আটটি ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সত্য, আটটি ওয়ার্ডে আমাদের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। তবে দলের ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন তারাই ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। কোনো সমস্যা হবে না।

সর্বশেষ খবর