শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

নতুন সিলেট গড়তে চান আরিফ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

‘ড্রিম টিমের সাহায্যে নতুন সিলেট’ গড়ার প্রত্যয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল বিকালে নগরীর কাজীটুলার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ১৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন আরিফ। একই দিন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন মহানগর জামায়াতের আমির ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। লিখিত ইশেতহার ঘোষণার পর আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ হলেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। অথচ আগামীর সিলেট কিংবা আজ থকে ৩০ কিংবা ৫০ বছর পর আমরা কীভাবে সিলেট নগরীকে দেখতে চাই এর চিন্তাভাবনা শুরু করা জরুরি।

 দৈনন্দিন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশনকে সম্প্রসারণ করে আগামী প্রজন্মের সিলেট গড়ার ক্ষেত্রেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে।’

আরিফ বলেন, ‘সবাই মিলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে ‘নতুন সিলেট’ গড়া খুবই সম্ভব। এই ‘নতুন সিলেট’ হবে পরিচ্ছন্ন, থাকবে না কোনো যানজট। ‘নতুন সিলেটে’ থাকবে মেট্রোরেল কিংবা টিউব (আন্ডারগ্রাউন্ড রেল)। থাকবে না তারের জঞ্জাল, তার যাবে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে। ‘নতুন সিলেটে’ থাকবে খোলা উদ্যান, বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ভবন। মার্কেটে মার্কেটে হেঁটে হেঁটে শপিং করবেন নাগরিকরা। পাশাপাশি থাকবেন বিদেশি পর্যটকরা।’

বিএনপি নেতা আরিফ বলেন, ‘নতুন সিলেটে থাকবে ‘সিলেট টাওয়ার’। এই উঁচুতম স্থানকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হবে অন্য রকম এক আবহ, যেখানে উপস্থাপিত হবে সিলেটের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। সিলেট টাওয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে পর্যটকরা শুধু সিলেটের উঁচু-নিচু টিলা আর সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখেই মুগ্ধ হবেন না, তাদের জন্য সেখানেই থাকবে এক টুকরো মিনি সিলেট। নতুন সিলেট কোনো অলীক স্বপ্ন নয়। এই নতুন সিলেট গড়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক সুন্দর পরিকল্পনা, সরকারের সদিচ্ছা, সবার আন্তরিকতা ও ত্যাগের মানসিকতা। প্রয়োজন একটি ‘ড্রিম টিম’। যে টিম থাকবে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে। বাধা এলেও এই টিম ইস্পাতকঠিন মনোভাব নিয়ে কাজ করবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফ বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে নগরীর মানুষের কাছে জলাবদ্ধতা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করি। নগরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নয়টি প্রধান ছড়া এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সবগুলো খালের পানির প্রবাহ নিশ্চিতের জন্য খাল দখলমুক্তকরণ, খনন এবং নাগরিক বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে খালগুলো সৌন্দর্য বর্ধন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করে ড্রেন সচল রাখা গেছে। ফলে নগরীর মানুষ এখন জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে প্রায় মুক্ত।’ আগামীতেও ছড়া ও খাল উদ্ধার কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন এবং সুরমা নদী খনন করার উদ্যোগ নেবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সিলেটকে এগিয়ে নিতে চান আরিফ। তিনি বলেন, ‘সিলেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াইফাই চালুর কাজ শুরু হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ‘তথ্যপ্রযুক্তি ভবন’ গড়ে তোলা হবে।’

যানজট নিরসনে টাউন বাস চালু, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য কমানো, স্কুলভিত্তিক বাস চালু, রাস্তা প্রশস্তকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন আরিফ। হকারদের পুনর্বাসন, আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা, তরল বর্জ্য, ক্লিনিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্য আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে অটোক্ল্যাপ পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করার কথাও বলেন তিনি। বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বস্তিতে স্যানেটারি কক্ষ নির্মাণ, বস্তি বা গরিব কল্যাণ ফান্ড গঠন, বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, বস্তিবাসী নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বিউটি পারলার প্রশিক্ষণসহ ‘মোবাইল ট্রেনিং সেন্টার’ চালু করার অঙ্গীকার করেন আরিফ। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য স্যাটেলাইট ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, ২৫ শয্যাবিশিষ্ট কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করার কথা বলেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুলের সংখ্যা ও কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কানেকটিং ক্লাসরুম কার্যক্রম চালু করা, নগরীর বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করা, তরুণ প্রজন্মকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন আরিফুল হক চৌধুরী।

ইশতেহার ঘোষণাকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াত প্রার্থীর ইশতেহার : সিসিক নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন মহানগর জামায়াতের আমির ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। গতকাল দুপুরে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও মর্যাদাপূর্ণ সিলেট মহানগরীর জনগণের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মাঝে রয়েছে অনেক ব্যবধান। এই ব্যবধানের পেছনে যেমন রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা ও বাস্তব কারণ, তেমনি রয়েছে সুষ্ঠু, বাস্তবধর্মী ও দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং কাঙ্ক্ষিত যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের অভাব। নাগরিকের উন্নয়ন, আধ্যাত্মিক মর্যাদা সংরক্ষণ ও মানবিক সিলেট নগরী গড়ে তুলতে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। বিশ্বায়নের এ যুগে ‘মানবিক সিলেট’ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। আর পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত, আধুনিক ও ডিজিটাল নগরী বিনির্মাণই হচ্ছে আমার অঙ্গীকার।’ সিলেটকে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ফুটপাথ দখলমুক্তকরণ ও সম্প্রসারণ করা হবে। হকারদের পুনর্বাসন ও হলি ডে মার্কেট চালু, জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানির অভাব দূরীকরণ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে উন্নত করা হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেটের আঞ্চলিক দায়িত্বশীল অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর