বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেউ খোঁজ নিচ্ছে না রাজীব পরিবারের

বাসচাপায় নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ খোঁজ নিচ্ছে না রাজীব পরিবারের

বাসচাপায় নিহত আবদুল করিম রাজীবের পরিবারের খোঁজ নিচ্ছে না কেউই। মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিহত দিয়ার পরিবারের খোঁজ রাখলেও উল্টো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে রাজীবের পরিবার। ছেলের দাফন শেষে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান রাজীবের মা। বার বার ঘুরেফিরে দেখছেন ছেলের থাকার ঘরটি। যেন খুঁজতে চাইছেন ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি। ছেলেকে দাফন করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মা মনোয়ারা বেগম ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন হাতিয়া থেকে। দুই ঈদে আর পরীক্ষা শেষে ছুটিতে বাড়ি যেতেন রাজীব। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। তবে একটু আগেই পৌঁছেছেন তিনি। প্রায় এক মাস আগে। বরাবরের মতোই মনোয়ারা বেগম ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। তবে এ অপেক্ষা ছিল দমবন্ধকর; যা তিনি কল্পনায়ও ভাবেননি।

রবিবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে কালশী ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম ও আবদুল করিম রাজীব। আহত হন আরও ১৪ জন।

রাজীবের খালাতো ভাই মিরাজ ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে জানান, স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় তারা রাজীবের লাশটি গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করেন। এ ছাড়া কোনো পক্ষই রাজীবের পরিবারকে সমবেদনা জানানো দূরের কথা কোনো    খোঁজই নেয়নি। রাজীবের বাবা নূর ইসলাম ছিলেন দিনমজুর। তিনি চারটি সন্তান রেখে মারা যান অনেক আগেই। আছেন শুধু মা মনোয়ারা বেগম। তার থাকার ঘর নেই, একচিলতে জমি নেই, এমনকি হাতে টাকাও নেই। তবু তিনি দমে যাননি। রাজীব ছাড়া আরও এক ছেলেকে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ফিরে গেছেন সেই মায়ের কাছে। তবে কোনো স্বপ্ন পূরণ করে নয়, লাশ হয়ে। জানা যায়, রবিবার রাজীব দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রথমে ঢাকায় তার খালাতো ভাইদের সঙ্গে, পরে হাতিয়ায়। সেদিন রাজীবের স্বজনরা জানিয়েছিলেন, তখনো তারা জানতেন না রাজীব আর নেই। তারা আশকোনার বাসা থেকে বেরিয়ে কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে এগোচ্ছিলেন। অবরোধ শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। কীসের অবরোধ, কেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। আর অনবরত কলেজ থেকে দ্রুত পৌঁছাতে তাগাদা দেওয়া হচ্ছিল। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যখন পৌঁছালেন, তখন দেখেন তাদের প্রিয় রাজীব মৃত। এদিন রাত ৮টার দিকে লাশ বরফে মুড়ে লাশবাহী গাড়িতে করে তারা নোয়াখালীর চেয়ারম্যানঘাটে পৌঁছান। আবার বরফ দিয়ে নৌকায় করে নেওয়া হয় হাতিয়ার চৌমুহনীতে। হাতিয়ায় নানার কবরের পাশে দাফন করা হয় রাজীবকে।

সর্বশেষ খবর