বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ২১ হাজার যানে লাইসেন্সবিহীন চালক!

প্রকৃত সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ২০ প্রকারের নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ২টি। এর বিপরীতে চালকের লাইসেন্স রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৭১১ জনের। এই হিসাবে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ২১ হাজার ২৯১টি যানবাহনের স্টিয়ারিংয়েই লাইসেন্সবিহীন চালক। আর অনিবন্ধিত গাড়ি তো রয়েছেই। প্রতিনিয়ত এ সব চালকের দখলেই থাকে  গণপরিবহনের স্টিয়ারিং। ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অভিমত সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগ আছে, লাইসেন্সবিহীন চালকের এই সংখ্যা এরচেয়ে আরও কয়েকগুণ বেশি। কর্তৃপক্ষের কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় লাইসেন্সবিহীন চালকের প্রকৃত সংখ্যার তথ্য নেই। তাছাড়া, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে অনভিজ্ঞ চালককে লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সরকারি ফি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। অথচ ১০ হাজার টাকার কমে বেশিরভাগের চালকই লাইসেন্স পায় না। যার ফলে চালকদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো, প্রতিযোগিতার মনোভাব পরিহার করা, নিয়ম না মেনে ওভারটেক এবং কানে মোবাইল ফোন নিয়ে গাড়ি না চালাতেও চালকদের বাধ্য করতে হবে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কার্যালয় ২০ প্রকারের ২ লাখ ১৫ হাজার ২টি যানবাহনের নিবন্ধন দেয়। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ৩৭৪, অটোরিকশা ২৪ হাজার ৯৬৩, অটোটেম্পো ৩ হাজার ৩৩৮, বাস ১ হাজার ৫৯৭, কার ভ্যান ২৩৯, কাভার্ড ভ্যান ৩ হাজার ৭০৬, হিউম্যান হলার ৩ হাজার ৪৮৫, জিপ ৩৫৬৪, প্রাইভেট কার ৩১ হাজার ৯৬৪, মোটরসাইকেল ৯৩ হাজার ৬৬৮, ট্রাক ৯ হাজার ৩৮ ও ট্যাংকার ৫৮৪টি। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরে নিবন্ধিত চালকের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ৪০৯ এবং জেলায় ৭৮ হাজার ৩০২ জন।  বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ তৌহিদুল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে গাড়ির ফিটনেস নেওয়া এবং চালকের লাইসেন্সের আবেদন দুটিই  বেড়েছে। সাধারণ সময়ে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০টি লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়লেও গত দুই দিনে জমা পড়েছে ৩০০ থেকে ৩২০টি। তাছাড়া সাধারণ সময়ে দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০টি গাড়ি ফিটনেস দেওয়া হলেও গত দুইদিনে দেওয়া হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০টি।’  বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উসমান গণি বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন চালকের কোনো তালিকা নেই। এটি কখনো তৈরি করা হয়নি। তবে লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।’ জানা যায়, প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটানো যানবাহনগুলোর বেশিরভাগেরই চালক অনভিজ্ঞ ও লাইসেন্সবিহীন। তারা যান চলাচলের নিয়ম যেমন জানেন না, তেমনি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান। সঙ্গে প্রতিনিয়তই কানে থাকে মোবাইল ফোন। তদুপরি কম বয়সী হওয়ায় এসব চালকের মধ্যে সব সময় প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছেই। প্রসঙ্গত, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর পর দেশজুড়ে অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিষয়টি সামনে আসে। ফিটনেসবিহীন যান ও লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।

সর্বশেষ খবর