বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রেনের আগাম টিকিট কিনতে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড়

শূন্য হাতে বাস কাউন্টার কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ যাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিট কিনতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। টিকিটের জন্য কেউ আগের দিন দুপুরে, কেউ রাতে, কেউবা গতকাল ভোর থেকে কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই প্রত্যাশীদের এই দীর্ঘ সারি স্টেশনের প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে সড়কে গিয়ে পৌঁছে। তবে বিক্রি শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় সব টিকিট। যার ফলে প্রায় ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রত্যাশিত টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ২৬টি কাউন্টারে একযোগে দেওয়া হয় ১৭ আগস্টের টিকিট। ২২ আগস্ট সম্ভাব্য ঈদের দিন ধরে ২৩ হাজার ৫৩৬টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আজ বিক্রি হবে ১৮ আগস্টের টিকিট। ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট যথাক্রমে ১৯, ২০ এবং ২১ আগস্টের টিকিট বিক্রি করা হবে।

এদিকে ঈদে বাসের টিকিট কেনার চাপ দেখা যায়নি রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে। বিক্রির প্রথম দিন মঙ্গলবার সব টিকিট বিক্রি হওয়াতে গতকাল অনেকটা অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কাউন্টার কর্মীদের। গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল সকাল ৮টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনে আগাম টিকিট বিক্রির আগ থেকেই প্রতিটি কাউন্টারের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। কাউন্টারের সাটার খোলার সঙ্গে সঙ্গে হৈহুল্লোড় দিয়ে ওঠেন উপস্থিত সবাই। প্রথমদিকে কাউন্টার থেকে টিকিট হাতে নিয়ে ফেরার সময় অনেকের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ছাপ। নাজমুল নামে একজন জানালেন, চার বন্ধু এসেছিলেন টিকিটের জন্য। টিকিট পেয়ে খুবই ভালো লাগছে তাদের। নারী কাউন্টারের সামনে ফারিয়া আফরিন নামে একজন জানান, তিনি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসেন টিকিটের জন্য। প্রায় ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর প্রত্যাশা অনুযায়ী এসি টিকিট পাননি। সবার আগে লাইনে থেকেও যদি এসি টিকিট না পাই তাহলে সেসব টিকিট কোথায় গেল? প্রশ্ন ছুড়েন তিনি।

নারীদের জন্য সংরক্ষিত দুটি কাউন্টারের সামনের সারিটিও অন্যগুলোর মতো ছিল অনেক লম্বা। নানা বয়সী নারীদের কেউ কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ মেঝেতে পেপার বিছিয়ে অপেক্ষা করেন টিকিটের জন্য। বিক্রির শুরুতে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় কাউন্টারের সামনের ফাঁকা স্থানটি। এক পর্যায়ে টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ সারি এঁকেবেঁকে স্টেশনের বাইরের রাস্তায় চলে যায়। তবে টিকিট বিক্রিতে সময় এবং সাধারণের ভোগান্তি কমাতে সারিতে অপেক্ষমাণদের হাতে হাতে টোকেন পৌঁছে দেয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ঈদ অগ্রিম টিকিটের চাহিদাপত্র নামে ওই টোকেনে যাত্রীর নাম, ঠিকানা, যাত্রার তারিখ, ট্রেনের নাম, শ্রেণি, আসন সংখ্যা ও ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়। এতে মানুষের কোলাহলপূর্ণ ভিড়ে কোনো ধরনের কথা আদান-প্রদান ছাড়াই একে একে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে সিট থাকা সাপেক্ষে টিকিট সরবরাহ করেন কাউন্টারের কর্মীরা। তবে টিকিট ছাড়ার চার ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ কাউন্টারের টিকিট শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  কথা হয় রাকিব আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রত্যাশিত টিকিট পেতে আগের দিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কমলাপুরে এসে সারিবদ্ধ হন। বলেন, সিলেটগামী জয়ন্তিকা ট্রেনের দুটি এসি টিকিট কাটতে অনেক আগ থেকে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করেও তা পাননি। টিকিট ছাড়ার শুরুর দিকে ২০-২৫ জনের পরই কাউন্টার থেকে জানায় এসি টিকিট শেষ। 

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রথম দিনেই টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে। যত মানুষ অপেক্ষায় আছে তাদের সবাইকে তো আর আমরা টিকিট দিতে পারব না। সম্পদ সীমিত। ঈদের সময় সবাই এসি টিকিট চায়, এ সময় চাহিদা থাকে বেশি কিন্তু এসি টিকিটের সংখ্যা তো কম।

জানা যায়, আগাম টিকিট বিক্রিতে অনলাইন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিক্রির জন্য ২৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। আর ৫ শতাংশ ভিআইপি ও ৫ শতাংশ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। আর বাকি ৬৫ শতাংশ দেওয়া হয় কাউন্টার থেকে। একজন যাত্রী জন্য সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারেন। তবে টিকিট কাটার পর তা কেউ ফেরত দিতে পারবেন না। সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব প্রকার ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঈদ কেন্দ্র করে আগামী ২১ ও ২২ আগস্ট মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ২৩ আগস্টে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করবে না। এদিকে ঈদের আগের ৫ দিন ১৮ আগস্ট থেকে সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।

সর্বশেষ খবর