শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোয়া কোটি চামড়া কেনার প্রস্তুতি

পাচার ঠেকাতে তৎপর প্রশাসন

রুহুল আমিন রাসেল

নির্বাচনী বছর হওয়ায় এবার ঈদে প্রায় সোয়া কোটি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের আশঙ্কা— চামড়া পাচারের। এ আশঙ্কা দূর করে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ— বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর এক কোটি ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। নির্বাচনী বছরে প্রায় সোয়া কোটি চামড়া সংগ্রহ করা যাবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা, যে যার যার মতো প্রস্তুতি নিয়েছেন। আর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চামড়ার দাম প্রায় একই হওয়াতে পাচারের আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় থাকবে বিজিবি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এক পিস চামড়াও পাচার হবে না। এর আগে এবার কোরবানির চামড়া পাচার ঠেকাতে বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে বিজিবিকে। ওই চিঠিতে দেশের সবকটি সীমান্ত পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দর এবং ভারত অংশে কালীরানী, আংরাইল, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, বানোবেরিয়া, সুটিয়া, বাঁশঘাট ও আশপাশের এলাকা দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা বেশি। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, নির্বাচনী বছর হওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পরিমাণ বাড়বে। এবার লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ চামড়া দেশীয় পশু থেকে পাওয়া যাবে। চামড়ার গুণগতমান হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সারা বছর দেশে জবাই হওয়া পশুর অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। সারা বছর প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর মধ্যে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ১৫ লাখ। এবার ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্যানারির মালিকরা ঢাকায় কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আর রাজধানীর বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। একইভাবে সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং বকরির প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন কোরবানির পশুর চামড়ার দর রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, সারা দেশে খাসির চামড়া ২৫ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণে সুপারিশ করা হয়। জানা গেছে, দেশে প্রতিনিয়ত কমছে চামড়ার দাম। এর কারণ, বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের বিক্রি ও চাহিদা উভয়ই কমে গেছে বলে অজুহাত ব্যবসায়ীদের। গত ছয় বছরে গরু ও খাসির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে কমেছে ৪০ টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে কেনা হয়। সেখানে ২০১৮ সালে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এদিকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে মাত্র ৪০টি ট্যানারি শতভাগ উৎপাদনে সক্ষম। সেখানকার রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্যানারি শিল্প মালিকরা। ইতিমধ্যে রাজধানীর হাজারিবাগ থেকে ১৫৫টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে সব ট্যানারি এখনো পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর