ভোগান্তি বেড়েছে বগুড়া শহরবাসীর। ২৪ ঘণ্টায় বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে ১৮ বার ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি শহরের ফুটপাথ দখল, যত্রতত্র সিএনজিচালিত অটো রিকশা, রিকশা, গাড়ি পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ১ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১০ মিনিট। যানজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থী, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ জনসাধারণের জরুরি কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। যানজট নিরসনে কেউ কোনো ভূমিকা রাখছে না। সে কারণে এক শ্রেণির মানুষ ফুটপাথ, রাস্তা দখল করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আর শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে দোকান বসিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালীরা।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর বগুড়া। এই শহরে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গড়ে উঠেছে বড় ছোট কলকারখানা। জেলার অন্যান্য উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ বসতি গড়ছে এই শহরে। এতে মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। প্রায় ৩০ হাজার রিকশার সঙ্গে শহর এবং শহরের ওপর দিয়ে চলছে ২০ হাজারেরও বেশি সিএনজি। এ ছাড়া বগুড়ার সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত রেল সড়ক রয়েছে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার। এই রেল সড়ক হয়ে বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৮ বার রেল চলাচল করছে। বগুড়া শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে রেল লাইন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় লেভেল ক্রসিং রয়েছে কমপক্ষে ৮টি। লেভেল ক্রসিংগুলো রয়েছে শহরের ব্যস্ততম এলাকা চকযাদু ক্রস লেন, থানা রোড, রাজাবাজার রোড, নারুলী, সাবগ্রাম দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক, সরকারি আজিজুল হক কলেজে দুটি, বগুড়া ঢাকা মহাসড়কের তিনমাথায় একটি। ট্রেন চলাচলের সময় লেভেল ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নিয়মের ফাঁদে পড়ে কমপক্ষে ৭ মিনিট থেকে ১০ মিনিট করে চলাচল বন্ধ হয়ে থাকছে। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। প্রতি ট্রেনের জন্য ১০ মিনিট করে রেলগেট বন্ধ থাকলে গড়ে ১৮০ মিনিট বা ৩ ঘণ্টা সময়ের খাত থেকে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শহরের ফুটপাথ দখল, যত্রতত্র সিএনজি চালিত অটো রিকশা, রিকশা, গাড়ি পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকানের বাড়তি চাপ, ফুটপাথ দখল করে ইচ্ছেমতো হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পান দোকান, ফল ব্যবসায়ী, দোকানের চালা সবই বাড়িয়ে ফুটপাথের ওপর রেখে দেওয়ার কারণে চলাচলে মানুষের বিঘ্ন ঘটছে। রেললাইনের এপার-ওপার মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ, স্কুল কলেজ, ব্যাংক, বীমা, জেলা প্রশাসন অফিস, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, থানা, সদর উপজেলা প্রশাসন, বাজার থাকলেও হাজার হাজার সুবিধাভোগীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিনিয়ত সময়ের সঙ্গে ছুটতে হচ্ছে। বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ রোগী পরিবহনের গাড়িগুলোও আটকা পড়ছে ট্রেন চলাচলের সময়। যানজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে শহরবাসী। শহরের ভিতর দিয়ে ট্রেন চলাচলে যানজটে পড়ে সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে পারছেনা বগুড়ার মানুষ। এ কারণে দাবী উঠেছে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে সাতমাথা থেকে ফুলবাড়ী পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ করার। সড়ক সম্প্রসারণ করে সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও স্থায়ী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে দেওয়া। এতে ভোগান্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে সময়ের অপচয় রোধ করে সময়মতো কাজ করতে পারবে। বগুড়া শহরের কঠালতলা মোড়ের সব ফুটপাথ দখল করেছে ভাসমান ও স্থায়ী ব্যবসায়ীরা। সেখানে হাঁটার কোনো পথ নেই।

বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার সমাজ সেবক মো. আবু তালেব জানান, দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি রেলপথ শহরের বাইরে স্থাপন করা হবে। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠছে না। রেলপথের কারণে প্রায়ই সময়মতো গতন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। রেলপথ শহরের মধ্যে থাকলে ওভার ব্রিজ বা ফ্লাইওভার করে শহরবাসীর ভোগান্তি দূর করা সম্ভব।

বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায় বসবাসরত গণিতের প্রভাষক আলমগীর কবির জানান, মূল শহরের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচলের ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বগুড়ার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়িত জেলা শহরে জনগণের চাপ বাড়ছে।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. বেঞ্জুরুল ইসলাম জানান, পশ্চিম বগুড়ার সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৮ বার ট্রেন চলাচল করে। লেভেল ক্রসিংগুলোতে গার্ড রয়েছে।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ একেএম মাহবুবর রহমান জানান, পৌরসভা থেকে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার পর তারা আবার সেখানে বসছে। এ বিষয়ে পৌর নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।