রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারী শিশু মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়ছে

নতুন ৪১ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু

আরাফাত মুন্না

বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ নিরসনে নতুন ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে সরকার। গত ১০ এপ্রিল জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের পদায়নের পর এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়বে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যেসব জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে তার মধ্যে মামলার জট বিবেচনায় ২২টি জেলায় নতুন করে আরও ২৯টি ট্রাইব্যুনাল এবং যেসব জেলায় এই ট্রাইব্যুনাল নেই তার মধ্যে ১২ জেলায় একটি করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এই ৪১ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে দেশের ৪৬ জেলায় ৫৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন ছিল। এখন জট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট জেলার নতুন ট্রাইব্যুনালেও এসব মামলা স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৫টি।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নতুন ৪১টি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালে নতুন মামলা দায়েরের পাশাপাশি জট বিবেচনায় পুরনো ট্রাইব্যুনাল থেকেও মামলা স্থানান্তরিত করা হবে। তিনি বলেন, নতুন এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত মামলা আগের তুলনায় আরও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম  কোর্টের মুখপাত্র স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের পদায়ন করা হয়েছে। বিচারকরা পদে যোগদান করার দিন থেকেই এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ ও মামলাজটের বিষয়টি লক্ষ্য করে ২০১৫ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সারা দেশে আরও ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করে। এরপর আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ট্রাইব্যুনালগুলোর জন্য ৪১ জন বিচারকসহ মোট ২৪৬টি পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা অনুমোদন দেয়। একই সঙ্গে যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদি ক্রয়েরও অনুমোদন দেওয়া হয়। তার আগে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর গত বছর ২৯ নভেম্বর নথি আসে আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে পর্যাপ্ত জেলা জজ না থাকায় এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির শর্ত নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গঠনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির শর্ত শিথিল করে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী এই শর্ত শিথিল করা হয় বলে জানানো হয় গেজেটসংক্রান্ত বিবৃতিতে। এর ফলে নতুন ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনে আর কোনো আইনি জটিলতা থাকল না। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটির বৈঠকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১১০ জন জেলা জজের পদায়নের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় গত ১০ এপ্রিল নতুন ৪১ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন জেলায় পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

নতুন ৪১ ট্রাইব্যুনাল যেসব জেলায় : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই এমন ১২ জেলায় নতুন করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো— রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর ও ভোলা। এ ছাড়া বিদ্যমান মামলার জট সহনীয় পর্যায়ে আনা ও সুষ্ঠুভাবে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বিচারক ও মামলার অনুপাত বিবেচনায় ২২টি জেলায় আরও ২৯টি নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বিদ্যমান ৫টি ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি নতুন করে আরও চারটি, চট্টগ্রামে তিনটির পাশাপাশি নতুন করে আরও ৪টি, নীলফামারী, খুলনা, রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জে দুটি করে, যশোর, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, কক্সবাজার, কুমিল্লা, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারীতে নতুন একটি করে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর