চট্টগ্রামের চাক্তাই থেকে কালুরঘাট আউটার রিংরোডের সড়কবাঁধটির নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এ কাজের প্রক্রিয়া চললেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় জমির মালিকরা। ক্ষতিপূরণ চেয়ে দীর্ঘদিন আগে স্থানীয় জমির মালিকরা আবেদন করলেও ‘রহস্যজনক’ কারণে টাকা দিতে কৌশলী আচরণ করছে কর্তৃপক্ষ। এতে হতাশার পাশাপাশি আদৌ টাকা পাবেন কিনা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন মালিকরা। তবে এ প্রকল্পের আওতায় তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। বর্তমানে দুই কিলোমিটারে মাটি ভরাটের (বাকলিয়ার কল্পলোক সংলগ্ন) কাজও চলছে। ভূমি অধিগ্রহণ করা মালিকদের টাকা আগামী মাসেই দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রাজীব দাশ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রাথমিকভাবে ৬ মাস আগে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে মাটি ভরাটের কাজসহ চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল ও রাজাখালী শাখা খালের মধ্যে তিনটা স্লুইস গেট (রেগুলেটর) তৈরির কাজ চলছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই শেষ করার জন্য দ্রুত এ কাজ করা হচ্ছে এবং ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ কেউ করেননি। তাছাড়া প্রায় ৫০০ জন আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিডিএর ওই প্রকল্পের আওতায় ভূমি মালিকদের দেড়গুণ টাকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জমির মালিক বলেন, বেশ কিছুদিন আগে থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও স্থানীয় মালিকদের টাকা প্রদানের বিষয়ে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না সিডিএ কর্তৃপক্ষের। তারা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ শেষে আমাদের জায়গার টাকা না দিয়েই মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। এতে ভূমি ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তারপরও ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এতে কবে নাগাদ টাকা পাবেন, বা আদৌ পাবেন কিনা সেই দুশ্চিন্তায় ভুক্তভোগীরা। সিডিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল হয়ে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এই সড়কবাঁধটি নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম নগরীর একাংশের জলজট ও যানজট নিরসন হবে। তীরে ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কবাঁধ (সড়কসহ বেড়িবাঁধ) নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। একনেকে অনুমোদিত ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ, পরিপূর্ণ নকশা বা ডিটেইল ডিজাইন, ডিজিটাল সার্ভে, মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের জুন নাগাদ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর একাংশের লোকজন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। ঢাকা ও কক্সবাজারগামী যানবাহন নগরীতে প্রবেশ ছাড়াই এ সড়ক ব্যবহার করে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছবে। এ প্রকল্পের জন্য ৬৯ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। নগরীর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটক (রেগুলেটর) ও পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে। ১৯৬১ সালের মাস্টারপ্ল্যানেও এ সড়ক ও বাঁধের কথা বলা হয়েছিল।