শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

থামছেই না ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে গত বুধবার ভুল চিকিৎসায় মো. সাকের (৪০) নামে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্বজনরা। সাকের মাথাব্যথা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার স্বজনদের অভিযোগ, ‘ভর্তির পর ঘুমের ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি।’ গত ৪ সেপ্টেম্বর পিপলস হাসপাতালে আবু তালেব লিটন ও ৩০ জুন ম্যাক্স হাসপাতালে পুলিশের স্পেশাল রায়ট ফোর্সের (এসআরএফ) নায়েক জাহাঙ্গীর ভুল অপারেশনের শিকার হন বলে অভিযোগ আছে। গত ২৯ জুন সমকাল চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী কন্যা রাইফা খান ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার পিতা। এ নিয়ে সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদফতর পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যুর বিষয়টি উঠে আসে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি অনিয়ম শনাক্ত করে। গত ৩ জুলাই বেসরকারি এএফসি ফরটিস হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মো. লোকমান চৌধুরী (৭৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে অভিযোগ করেছিলেন তার পুত্র মো. জুয়েল।

এভাবে বেসরকারি হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। ফলে অবহেলায় রোগী মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টানা হচ্ছে না। এ কারণে ক্রমশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। রোগীর স্বজন ও সচেতন মহলের অভিযোগ, একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর সেটি কীভাবে চলছে, সব নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, রোগী প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে কিনা, হাসপাতালের অভ্যন্তরের পরিবেশ যথাযথ থাকে কিনা, সরকারি নিয়ম মতে অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউসহ এ জাতীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো সঠিকভাবে চলছে কিনা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স উপস্থিত থাকছেন কিনা নিয়মিত এসব কঠোরভাবে করা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো— সরকারের দায়িত্বশীল বিভাগ এ ব্যাপারে কুম্ভকর্ণের ঘুমেই থাকে। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একটু নড়েচড়ে বসেন। এর পরপরই আবার পূর্বের অবস্থা বিরাজ করে। এভাবেই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল। তবে জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্যসেবার এমন অবস্থার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। ভুক্তভোগী স্বজন ইরশাদুল আলম বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনার পর যদি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে অন্যদের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হতো। পরবর্তীতে অন্যরাও রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকতেন। এখন কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সবাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।’ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটছে তা ঠিক। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করে না। এটাই সমস্যা। অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিয়ম মতো ব্যবস্থা নেই। তবে নিয়মিত কঠোর মনিটরিংয়ের যে বিষয়টি আসছে, জনবলসহ নানা কারণে তা আমরা করে উঠতে পারছি না। তবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি। এটি নিয়মিত অব্যাহত আছে।’ 

সর্বশেষ খবর