শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিকিৎসকের ছড়াছড়ি ঢাকায়, ফাঁকা গ্রাম

কাজ নেই অনেকের, পার করছেন অলস সময়

মাহবুব মমতাজী

রাজধানী ঢাকায় অনুমোদিত পদের চেয়ে চিকিৎসকের উপস্থিতি অনেক বেশি। উল্টো চিত্র গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতি সহজেই বোঝা যায় ঢাকা বিভাগের চিকিৎসকের উপস্থিতির পরিসংখ্যান দেখে। এ বিভাগে অনুমোদিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা তিন হাজার ১৫৭ জন। অথচ উত্তরাঞ্চলের ২১ জেলা, উপকূলীয় ও হাওর এলাকাগুলোয় রয়েছে তীব্র চিকিৎসক সংকট। উদাহরণ হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। এখানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর জন্য রয়েছেন ২৭ জন ফিজিশিয়ান। তবে হাসপাতালটিতে অনেক সময় রোগী থাকেন না বলেও জানা গেছে। এখানে কোনো রোগীকে ভর্তি করা হয় না। শুধু জরুরি বিভাগ ও আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসক আছেন সাতজন, আর নার্স ১১ জন। গত সপ্তাহে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের আউটডোরে বসে কয়েকজন চিকিৎসক গল্প করছেন। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক অবস্থানকালে কোনো রোগীকে আসতে দেখা যায়নি। কথা হয় হাসপাতালটির অর্থোপেডিক কনসালট্যান্ট শাহরিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বসে অলস সময় পার করছি আমরা। এখন আপাতত কোনো কাজ নেই। তবে রোগীর জন্য অপেক্ষা করছি।’ কিন্তু এটি গ্রামের থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো নয়, যেখানে প্রায় সময়ই চিকিৎসক বা ফিজিশিয়ান সংকটের মুখোমুখি হন সাধারণ রোগীরা। চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হওয়া ২০১৭ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, দেশে চিকিৎসকের ২৫ হাজার পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২১ হাজার পদ পূরণ হয়েছে। আর ফাঁকা রয়েছে ১৭ শতাংশ পদ। কিন্তু যখন অন্য বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকট বলা হচ্ছে, ঠিক তখন ঢাকা বিভাগে দেখা যায় তিন হাজারের বেশি অতিরিক্ত চিকিৎসকের অবস্থান। ঢাকায় আট হাজার ৮০৬টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ১১ হাজার ৯৬৩ জন। বাকি সব বিভাগের চিত্র পুরো উল্টো। যেমন চট্টগ্রাম বিভাগে চিকিৎসক সংকট রয়েছে ১ হাজার ৪৮১ জন, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ২৯৫ জন, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ২৭০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ২২২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৬১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭৫ জন এবং সিলেটে রয়েছে ৬৪০ জন চিকিৎসকের সংকট।  জানা যায়, বেশির ভাগ চিকিৎসক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ডেপুটেশন নিয়ে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে অবস্থান করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের ২১টি জেলায় চিকিৎসক সংকটের চিত্র ভয়াবহ। এসব জেলা মূলত উত্তরাঞ্চল, উপকূলীয় ও হাওর এলাকা ঘিরে। জেলাগুলো হলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, গাইবান্ধা, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, পাবনা, গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা। এই জেলাগুলোর বেশির ভাগ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ।

উপজেলার কোনো কোনো চিকিৎসক জেলা সদরে কিংবা ভালো যোগাযোগপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু শহরের ১ থেকে ২০ শতাংশ শূন্য পদের বিপরীতে চিকিৎসকের উপস্থিতি পাওয়া যায় অনেক বেশি।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগই গ্রামে বসবাস করেন। অথচ ভালো চিকিৎসকের সিংহভাগই শহরভিত্তিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক সংকট নিরসনে কাজ শুরু করেছি। মন্ত্রণালয়ের আদেশে এখন ঢাকা বিভাগে কোনো চিকিৎসককে পদায়ন করা হচ্ছে না। আর গ্রামে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৩ হাজারের মৌখিক পরীক্ষার পরই তাদের পদায়ন শুরু হবে। তবে প্রথম দিকে নেওয়ার কথা ছিল পাঁচ হাজার, এখন তা ১০ হাজারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর