শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত

মওলানা ভাসানীর ৫২ শিক্ষকের পদত্যাগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ শিক্ষক একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হাউস টিউটর ও সহকারী প্রক্টর রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিয়ম লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক পরীক্ষা দেওয়ানোর সময় শিক্ষকরা বাধা দিলে তাদের লাঞ্ছনা করেন ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে বিচার চেয়ে না পাওয়ায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৫২ জন শিক্ষক একযোগে রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরও এক ছাত্রীকে জোর করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরীক্ষার ফল এক দিন আগে ঘোষণা করায় এটিকে অধ্যাদেশবিরোধী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতা নামের এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেন। বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন ও শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মারতে উদ্যত হন। পাশাপাশি ঈশিতার পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতারা পাহারা দিয়ে রাখেন। যাতে করে কোনো শিক্ষক তাকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে না পারেন। এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহসভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা হয়। সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতারা বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্রছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. শাহিন উদ্দিন বলেন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রীর পরীক্ষায় ফেল করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদারসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন ও শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া, আদ্রিতা পান্না ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবালের বিচারের দাবি জানিয়ে ৫২ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

 শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। যে কোনো অজুহাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষক লাঞ্ছিত করে আসছেন। তাই এ ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আহৃত রিজেন্ট বোর্ডের সভা চলছে। সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

সর্বশেষ খবর