শিরোনাম
শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবশেষে চট্টগ্রামে চার কোটি টাকার বোন স্ক্যান মেশিন

ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অবশেষে চট্টগ্রামে চার কোটি টাকার বোন স্ক্যান মেশিন

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর অপেক্ষার পর অবশেষে চট্টগ্রামে এসেছে চার কোটি টাকা মূল্যের বোন স্ক্যান মেশিন। আগামী সপ্তাহে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মেশিনটি স্থাপন এবং পরিচালনায় প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা রয়েছে। এরপর মেশিন পরীক্ষণের কাজ করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করেই রোগীর সেবা দেওয়া হবে। মানুষের হাড়ে ক্যান্সার শনাক্ত করার অপরিহার্য এ মেশিনটি আনা হয়েছে হাঙ্গেরি থেকে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স কেন্দ্রে এটি বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সের পরিচালক ডা. আবু হায়াত মোহাম্মদ রকিবুল হক বলেন, ‘হাঙ্গেরি থেকে আনা মেশিনটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী প্রায় এক মাস আগে এখানে বসিয়ে দিয়েছেন। তবে মেশিনটি কীভাবে অপারেট করা হবে তা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধিদল এখানে আসবে। তারা আমাদের জনবলকে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করবেন। আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।’  চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে বহির্বিভাগে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে। এই হার এক স্থানে থেমে থাকে না। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে বোন ক্যান্সার শনাক্ত করা অধিক জরুরি। এটা দ্রুত শনাক্ত না হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।’ 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বোন স্ক্যানের মাধ্যমে ছবি দেখে হাড়ের ক্ষতস্থান চিহ্নিত করা যায়। ‘বোন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার’ এর জেনেটিক নাম বোন ক্যান্সার। সবচেয়ে কমন বোন ক্যান্সারগুলোর মধ্যে আছে অস্টেওসারকোমা, ক্যানড্রসারকোমা, ফাইব্রসারকোমা ইত্যাদি। সাধারণত বোন সেল, হাড়ের হেমাটোপয়েটিক উপাদান, হাড়ের ডেসময়েড বা সাইনোভাল উপাদান থেকে এর উৎপত্তি হতে পারে। বোন ক্যান্সার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি দুই ভাগে বিভক্ত। সেকেন্ডারি বোন ক্যান্সার সাধারণত শ্রোণী, কশেরু, ফিমার ইত্যাদিতে বেশি হয়। প্রাইমারি বোন ক্যান্সার খুবই বিরল। বেশিরভাগ বোন ক্যান্সারই ব্রেস্ট ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সারের পরিণাম হিসেবে হয়। তখন একে বলা হয় বোন মেটাস্টাটিক ক্যান্সার। বোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে, হাড়ের প্যাথলোজিক্যাল ডিসফিগারেশন, অবিরাম পিঠ ব্যথা, সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া শরীরে এক বা একাধিক ফ্র্যাকচার দেখা দেওয়া, টিউমারের আশপাশের প্রত্যঙ্গগুলো অবশ বলে মনে হওয়া, হাড়ের  উপরিভাগে মাংসের শক্ত পি দেখা যাওয়া, যার ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা হতেও পারে আবার নাও পারে। জ্বর, ওজন হ্রাস, ক্লান্তি দেখা দেওয়া, শরীরের গতি মন্থর হয়ে পড়া। তাছাড়া হাড়ের জয়েন্টেও ব্যথা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সবসময় হালকা হালকা ব্যথা থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে বোন ক্যান্সারের হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। বোন ক্যান্সারের কারণগুলো এখনো সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট নয়। তবে মনে করা হয় পূর্বের কোনো আঘাত বা ক্রনিক ইনফেকশন, হাড়ের অতি বৃদ্ধি, ক্রনিক প্রদাহজনিত জ্বালাপোড়া, বংশগত কারণ, বিভিন্ন ভাইরাস, রক্তের সমস্যা, রেডিয়েশন এক্সপোজারের কারণে বোন ক্যান্সার হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর