মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
যশোরের রাজনীতি

ত্রিমুখী আওয়ামী লীগ গতিহীন বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

২০১৪ সালের অক্টোবরের প্রথম দিন। তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এক মন্তব্যের প্রতিবাদে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। মানববন্ধন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ কর্মসূচি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। আহত হন চারজন। ঘটনাস্থল থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জনকে আটক করা হয়। গত চার বছরের মধ্যে এটিই ছিল বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের প্রকাশ্য বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি। অবশ্য গত চার বছরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো মাঝেমধ্যে কয়েকটি ঝটিকা মিছিল করলেও তার স্থায়িত্ব ছিল কয়েক সেকেন্ড। পুলিশের অনুমতিতে নানা শর্তে ইনডোরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি তারা পালন করেছে। গত বুধবার সকালে বিএনপি এমনই একটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে যশোর প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে। পুলিশের পক্ষ থেকে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা অর্থাৎ আধাঘণ্টার মধ্যে এ কর্মসূচি শেষ করার জন্য মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ আধাঘণ্টা বেঁধে দিলেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা আধাঘণ্টার আগেই কর্মসূচি শেষ করে এলাকা ত্যাগ করেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘ঢাকায় তো ২২ শর্তে সমাবেশ করতে দিচ্ছে, আমাদের এখানে আরও এক শর্ত বেশি যোগ করে দিচ্ছে, তা হলো সমাবেশে মাইক ব্যবহার    করা যাবে না। ফলে মাইক ছাড়াই ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে আমাদের সমাবেশ শেষ করতে হয়েছে।’ খোকন বলেন, ‘রাজনীতির স্বাভাবিক যে গতি থাকা উচিত, তা দেশের কোথাও যেমন নেই, যশোরেও নেই।’ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘জেলা বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় থেকে দুই ডজন করে মামলা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে। গ্রেফতার এড়াতে এসব নেতা-কর্মীকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ তবে এর বিপরীত অবস্থা আওয়ামী লীগে। সবাই আছেন ফুরফুরে মেজাজে। মূলত আগামী সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে যে তিন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে, তাঁদের আশপাশেই এখন নেতা-কর্মীর ভিড়। এ আসন থেকে এখন পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো ও বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। নেতা-কর্মীর ভিড়ও এ তিনজনের আশপাশে। তারা অবাধেই সভা-সমাবেশ-মিছিল করছেন। অনুমতিরও প্রয়োজন পড়ছে না। মাঠে নেই আসল প্রতিপক্ষ। তাই এ তিন নেতার কর্মীরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। মারপিট-খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে নিজেদের মধ্যেই। বছরখানেক আগে জেলা আওয়ামী লীগের দলাদলি নিরসনের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা থেকেই গেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কোনো কর্মসূচি গত কয়েক বছরে খুব একটা চোখে পড়েনি। রাজনীতির এই গতিহীন অবস্থার মধ্যেও প্রধান দুই দলের নেতারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। লবিং করছেন। নেতা-কর্মীদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। যশোরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে। ফলে কোনো জোটের প্রধান দলই যে এ আসনটি শরিকদের ছাড়বে না তা নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে সবার চোখ আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দিকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ আসনে এ দুই দল থেকে কে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ আবারও মনোনয়ন চাইবেন। গত কয়েক বছরে দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের তেমন কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই। জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার সঙ্গে রয়েছে। যদিও দলের কেউ কেউ মনে করেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজী নাবিলের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান রয়েছে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারের।গতবারও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক খালেদুর রহমান টিটোও এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শহরে তিনি শোডাউন করার চেষ্টা করেন।

বিএনপি থেকে এ আসনে বরাবরই দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। কিন্তু বর্তমানে তিনি খুবই অসুস্থ। বাড়ি ও হাসপাতালের মধ্যেই চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের। সে ক্ষেত্রে এ আসন থেকে তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে তরিকুল ইসলাম যদি নির্বাচনে অংশ না নেন, সে ক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়বে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও যশোর নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামও যশোর-৩ আসন থেকে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর