বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অসহায় তিন হাজার শিক্ষক

৬ বছর ধরে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বঞ্চিত

আকতারুজ্জামান

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকদের ২০১২ সালের ১৫ মে এক প্রজ্ঞাপনে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা দেয় সরকার। মর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনমানও উন্নত হওয়ার কথা। বাড়ার কথা বেতনও। কিন্তু বেতন বৃদ্ধি না হওয়ার পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ছয় বছর ধরে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

ফলে প্রাপ্যতা থাকা শিক্ষকরা এই সুবিধা না পেয়ে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা কম পাচ্ছেন। প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, ন্যায্য এই আর্থিক সুবিধা পেতে শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। যোগ্যতা থাকা শিক্ষকরা টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক বাংলা বিভাগের জাকিরুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর আগে সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পাওয়ার পর সিলেকশন গ্রেড পাননি। শিক্ষকরা জানান, ২০০৫ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া কোনো শিক্ষকই সিলেকশন গ্রেড ও কোনো টাইমস্কেল পাননি। দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড হিসেবে যেসব শিক্ষকের চাকরিকাল চার বছর হয়েছে তাদের সিলেকশন গ্রেড, যাদের আট বছর হয়েছে তাদের প্রথম টাইমস্কেল এবং যাদের ১২ বছর হয়েছে তাদের দ্বিতীয় টাইমস্কেল দেওয়ার কথা।

বকেয়া টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী বেলাল এ প্রতিবেদককে বলেন, সহকারী শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেলেও ন্যায্য আর্থিক পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের বকেয়া টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড জটিলতা দ্রুত নিরসন করে পরিবার-পরিজনদের অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দেবেন।

জানা গেছে, নতুন বেতন স্কেল হওয়ার আগে সরকারি মাধ্যমিকের নন-গেজেটেড শিক্ষকরা চাকরির বয়স আট বছর পূর্ণ হওয়ার পর প্রথম টাইমস্কেল, ১২ বছর পর দ্বিতীয় টাইমস্কেল এবং ১৫ বছরের পর তৃতীয় টাইমস্কেল পেতেন। এতে এই শিক্ষকরা ধাপে ধাপে নবম, অষ্টম ও সপ্তম গ্রেডে উন্নীত হয়ে আর্থিক সুবিধা পেতেন। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড ঘোষণার পর সিলেকশন ও টাইমস্কেলের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকরা জানান, দশম গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিকাল আট বছর পূর্ণ হয়েছে এমন ২০০৫ ও ২০০৬ ব্যাচের এক হাজার ৩৩৫ জন সহকারী শিক্ষক প্রথম টাইমস্কেল এবং ১২ বছর চাকরিকাল পূর্ণ হয়েছে এমন ২০০১ ও ২০০২ ব্যাচের প্রায় এক হাজার ৩১৩ জন সহকারী শিক্ষক সপ্তম গ্রেডে দ্বিতীয় টাইমস্কেল প্রাপ্য রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী টাইমস্কেল প্রাপ্য হওয়ায় চাকরির মেয়াদ ৮, ১২ ও ১৫ বছর হওয়া সহকারী শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন শাখার এক আদেশে ২০১৫ সালের বেতনস্কেল কার্যকর হওয়ার আগে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিষয়ে জাতীয় বেতনস্কেল ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে নির্দেশনা দেয়। গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাইমস্কেল সংক্রান্ত এক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাইমস্কেল দিতে প্রাপ্যতা থাকা শিক্ষকদের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকরা এখনো এ সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) আবদুল মান্নান বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি দফায় দফায় চেষ্টা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েও এ বিষয়টির সমাধান করতে পারেননি। তবে আমরা চাই দ্রুত এই শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা দেওয়া হোক।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর