বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গ্যাস সংকটে জনদুর্ভোগ

জাতীয় গ্রিডে কম সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত কয়েকদিন ধরে গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। গ্যাস না থাকায় রান্নাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। ঢাকার আশপাশের বহু কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঢাকার সিএনজি স্টেশনগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাসা-বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছে। আর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানান, এ কারণে তিতাস প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে। যা স্বাভাবিক সরবরাহের মাত্র ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে এখন গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রামেও গ্যাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জিটিসিএল সূত্রে আরও জানা যায়, এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য গত ৪ নভেম্বর থেকে সেই গ্যাস আসছে না। বর্তমানে এই ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকার নয়াপল্টন, শাহীনবাগ, লালমাটিয়া সি-ব্লক, বাড্ডা, শ্যামলী, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, কাটাসুর, পান্থপথ, রামপুরা, বনশ্রী, খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ী, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন, মগবাজার, দক্ষিণখান, গ্রিনরোড এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গৃহিণীরা দিনের বেলা রান্নার কাজ সারতে পারছেন না।

 বিকল্প হিসেবে কেউ কোরোসিন ও মাটির চুলায়, ইলেকট্রিক চুলা এবং রাইস কুকারে রান্নার কাজ সারছেন। ব্যাচেলরদের মেস ও নারী হোস্টেলের ছেলেমেয়েরা হোটেল রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খাচ্ছেন। অন্যদিকে মিরপুর ও আশপাশের এলাকায় মেট্রোরেলের কাজের জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। নতুন করে এলএনজি সরবরাহে ত্রুটির কারণে গ্যাস সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মিরপুর পল্লবী এলাকার এক বাসিন্দা খালেদা বেগম জানান, কয়েকদিন ধরে দিনের বেলা গ্যাসের চাপ এতই কম থাকছে যে তা দিয়ে খাবার পানিও ফোটাতে কয়েক ঘণ্টা লাগছে। আর অন্য রান্নার কাজ সারতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্যামলী এলাকার আরেক বাসিন্দা শাহিনা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীতে প্রতি বছরই গ্যাসের চাপ কমে যায়। কিন্তু এখনো শীত আসেনি। বিশেষ করে গত ৩-৪ দিন হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে গিয়েছে।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি পাইপলাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছে। বিদ্যমান এই গ্যাস সংকট কবে শেষ হবে তা নিয়ে কোনো আশ্বাস না দিলেও তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহূত গ্যাস আবাসিকের ব্যবহারের কাজে ব্যবহার করে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, শেভরন, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, তালেন্ডা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। আর গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে আরও ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে আসছিল। যদিও দেশে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে কিন্তু তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর