বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ চট্টগ্রাম বিএনপিতে

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ১৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩২ জনকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে হাইকমান্ড। দুটি আসনে বিএনপির কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকে চিঠি দেওয়া হয়নি। এ দুটি আসন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে যে আসনগুলোয় বিকল্প প্রার্থী রেখে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশেই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে স্ব-স্ব অনুসারী নেতা-কর্মীর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক আসনে ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা দিয়েছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে থেকে নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়ছেন অন্তঃকোন্দলে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-৮ আসন (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ও চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে প্রার্থিতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। এদিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগের দিন ৮ ডিসেম্বর বিএনপি বিকল্পদের বাদ দিয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। যে ২টি আসনে বিএনপির কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি তা হচ্ছে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)। এ ২টি আসন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামীর জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ১২টি আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে ৫টির বিকল্প প্রার্থী নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। এগুলো হলো চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ও চট্টগ্রাম ৯ (কোতোয়ালি)। এদিকে চট্টগ্রাম-৯ (নগরীর বাকলিয়া-কোতোয়ালি) আসনে নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সহসভাপতি শামসুল আলমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ডা. শাহাদাত এখন চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী। তবে দু-এক দিনের মধ্যে জামিনে কারাগার থেকে তার মুক্ত হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মুক্তির বিষয়টি এখনো সংশয়ে থাকায় ডা. শাহাদাতকে কারাগারে রেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে নাকি শামসুল আলমকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন তিনজন। তারা হলেন উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি সভাপতি সালাহ উদ্দিন ও কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার। তিন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি হাইকমান্ড কাকে ধানের শীষ দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের প্রার্থী নিয়েও। এখানে বিএনপির শক্ত প্রার্থী যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরী। কিন্তু তিনিও কারাগারে থাকায় এখানে বিকল্প হিসেবে তার ছোট ভাই ইসহাক কাদের চৌধুরী ও প্রয়াত বিএনপি নেতা এল কে সিদ্দিকীর ভাই এ ওআই বি সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। বিএনপি হাইকমান্ড এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনেও ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসনটিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর পরও এখানে মীর নাছির ও বিএনপির প্রয়াত নেতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে শাকিলা ফারজানার অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। কাকে চূড়ান্ত করা হবে— এ নিয়ে চলছে অনুসারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা।

 

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ানের সমর্থকদের মধ্যে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনেও ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে এবার সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা সাতকানিয়ার পাশাপাশি এ আসনটিও কর্নেল (অব.) অলির নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দাবি করেছে। তবে আসনটি এলডিপিকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে। এখানে বিএনপি নেতা শওকত আলী নুর, আবু আহমেদ হাসনাত ও অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন। তবে এখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

এদিকে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে যে ৭টিতে বিএনপির একক প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে তা হলো চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)।

সর্বশেষ খবর