শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী হাওয়া সারা দেশে

প্রচারণা নেই ধানের শীষের

বরিশালের ছয়টি আসনের চিত্র

রাহাত খান, বরিশাল

প্রচারণা নেই ধানের শীষের

জেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়েও কোনো প্রচারণা নেই বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের। এই অবস্থা বরিশাল জেলার ছয়টি নির্বাচনী এলাকায়। প্রতীক বরাদ্দের দুই দিন পর গত ১২ ডিসেম্বর বিপুল সমারোহে নির্বাচনী প্রচারণায় এলাকায় যান বরিশাল-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী এম জহিরউদ্দিন স্বপন। প্রথম ২/৩ দিন তার বাড়ির আশপাশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন। এর পরই বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর শুরু হয় ক্ষমতাসীনদের হামলা। এসব ঘটনার পর নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ কিংবা চলাচলের পথে হামলা হতে পারে আশঙ্কায় নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় তিনি। প্রচারণা বন্ধ রয়েছে জহিরউদ্দিন স্বপনের। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগ একের পর এক বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করছে। ঘরবাড়ি ভাঙছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রার্থী সংঘাত এড়িয়ে চলছেন। সেনা মোতায়েন হলে বিএনপি জনসাধারণকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রচারণার মাঠে নামবে। তখন পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে তাদের আশা। 

বরিশাল-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার নির্বাচনী এলাকায় একাধিকবার ক্ষমতাসীনদের হামলা এবং পুলিশের বাধার শিকার হয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি সীমিত পরিসরে প্রচারণা চালালেও এর বাইরে কোথাও তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা নেই। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তৃণমূলে প্রচারণা চলছে বলে জানিয়েছেন সান্টুর ঘনিষ্ঠজন মো. মাইনুল।

বরিশাল-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের নির্বাচনী এলাকার প্রেক্ষাপট একটু অন্য রকম। তিনি সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। তার অনুপস্থিতে ধানের শীষের পক্ষে তৃণমূল পর্যায়েও প্রচারণা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক মোশারফ হোসেন। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। বরিশাল-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের জে এম নুরুর রহমান প্রচারণার ১০ম দিনে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দরে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা তাকে মারধর করে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর। হামলায় আহত জাহাঙ্গীর দুই দিন শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে ওই আসনের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কোথাও ধানের শীষের পক্ষে কোনো প্রচারণা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। বরিশাল জেলার মধ্যে সদর আসনে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বলে ধরা হয়। অথচ এই আসনের সিটি করপোরেশন কিংবা সদর উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে কোথাও কোনো প্রচারণা নেই ধানের শীষের। বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই প্রচারণা চলছে ধানের শীষের। এর বাইরে তার স্ত্রী নাসিমা সরোয়ারও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন ধানের শীষের প্রচারণা। তাদের প্রচারণা শেষ তো দলের প্রচারণাও শেষ। সরোয়ার এবং তার সহধর্মিণী ব্যতীত বিএনপির কোনো প্রচারণা নেই কোথাও। গত তিন দিন ধরে পুলিশ বিএনপির অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার করায় তাদের প্রচারণাও সীমিত হয়ে পড়ছে। বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, নীরবে তাদের প্রচারণা চলছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীরা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

বরিশাল-৬ আসনে মহাজোটের শরিক জাপার নাসরিন জাহান রত্না আমীনের জন্য এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন খান। তিনি যেখানে যান সেখানেই চলে গণসংযোগ-প্রচারণা। তিনি নেই, তো প্রচারণাও নেই।

সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে সরকারি দলের হামলা রোধ হবে, ন্যায়বিচার পাবেন, তখন বিএনপি নেতা-কর্মীরাও সমানে প্রচারণা চালাতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন আবুল হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাহাঙ্গীর।

সর্বশেষ খবর