শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী হাওয়া সারা দেশে

আওয়ামী লীগে উন্নয়ন, সংস্কারে বিএনপি

ইশতেহার প্রসঙ্গে সেমিনারে বক্তারা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগে উন্নয়ন, সংস্কারে বিএনপি

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেওয়া আওয়ামী লীগের ইশতেহার সুদূরপ্রসারী উন্নয়নকেন্দ্রিক। দলটি  তাদের ইশতেহারে গণতন্ত্রের পাশাপাশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি তাদের ইশতেহারে সমসাময়িক রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলেছে।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের সভাকক্ষে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাজ গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত সেমিনারে ‘রাজনৈতিক ইশতেহারে অর্থনৈতিক ইস্যুর প্রতিফলন’ শীর্ষক  প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন। সেমিনারে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, ড. আহরার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ড. তাজুল ইসলাম। 

ড. বিনায়ক সেন বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ইশতেহার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে। তারা ‘উন্নয়নের গণতন্ত্রে’র কথা বলছে। অন্যদিকে বিএনপি তাদের ইশতেহারে আসন্ন রাজনৈতিক করণীয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। উভয় দলই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিলেও অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এক-তৃতীয়াংশ তরুণকে গুরুত্ব দিলেও শতকরা ২৫ ভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। দলগুলোর শহর ও গ্রামের মধ্যে বিকেন্দ্রীকরণ ও বৈষম্য হ্রাসের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তবে এক-তৃতীয়াংশ তরুণকে ধারণ করার জন্য কৃষিভিত্তিক পেশার বিকল্প নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এ ছাড়াও ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক ব্যবধান কমানোর বিষয়টি দলগুলোর ইশতেহারে আসেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলো ক্ষমতার স্বাদ পায়। তাই এর বিকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ তার দুর্নীতি-কুশাসনের ঢাল হিসেবে মৃক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নকে ব্যবহার করে। অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, গণতন্ত্রে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বরং সংখ্যালঘুদের মতকে বিবেচনায় নিতে হয়। আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অন্যদের মতকে চেপে ধরার প্রবণতা যাতে হ্রাস পায়।

এর আগে সেমিনারে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশে আনুপাতিক নির্বাচনের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধকার ড. নজরুল ইসলামের পক্ষে প্রবন্ধটি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম এম আকাশ।

প্রবন্ধে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চায় প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে’ প্রচলিত সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির পরিবর্তে ‘আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি’র ধারণা উপস্থাপন করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র বিকাশে ‘প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন’ই সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির পরিবর্তে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলন করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলসমূহ তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। এতে ক্রমানুবর্তিতা প্রতিফলিত হবে। অর্থাৎ কোনো দল যদি একটি আসন পায়, তবে ওই দলের প্রার্থী তালিকায় থাকা প্রথম প্রার্থী আসনটি পাবেন। দলটি দুটি আসন পেলে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে যার নাম আছে দ্বিতীয় আসনটি তিনি পাবেন। এ পদ্ধতিতে নির্বাচনে কোনো দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে আসন বরাদ্দ পাবে। কোনো দল সংসদের মোট আসনের কমসংখ্যক প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করতে পারবে। প্রবন্ধে বলা হয়, এ পদ্ধতিতে কোনো ভোট বিফলে যাওয়ার সুযোগ নেই। যে কোনো দলের সংসদে আসনের অনুপাত, নির্বাচনে প্রাপ্ত তার ভোটের অনুপাতের সমান হবে। বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশে এ পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়। এ পদ্ধতিতে ভোটের অনুপাতে সামান্য পরিবর্তনে নির্বাচনী ফলাফলে নাটকীয় পরিবর্তন রোধ হবে। এ ছাড়াও কারচুপির প্রবণতা রোধ, অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ ঘটবে।  

সর্বশেষ খবর