বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিঠাপুকুরে ফুরফুরে লাঙ্গল জয় নিয়ে চিন্তিত নৌকা

শাহজাদা মিয়া আজাদ ও রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

রংপুরের মিঠাপুকুর আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত জামায়াত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানীর প্রার্থিতা স্থগিত হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর। এ আসনের বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। প্রচার প্রচারণায় তিনি এগিয়ে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে চিন্তিত দলের নেতা-কর্মীরা। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত মিঠাপুকুরে এখন ধানের শীষ প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই। নৌকা-লাঙ্গলের উন্মুক্ত এ আসনে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম ভোলা ম-ল (হাতপাখা), জাকের পার্টির শামীম মিয়া (গোলাপ ফুল) ও বাসদের মমিনুল ইসলামও (মই)। তবে তাদের ব্যাপারে ভোটারদের মাঝে তেমন আগ্রহ নেই। এদিকে জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশিকুর রহমান এবার কোমর বেঁধে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় পার্টির এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর। এবার আর সেই সুযোগ দিতে নারাজ তিনি। প্রতিপক্ষের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর জানান, ‘মিঠাপুকুরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকেরা এখানে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। লাঙ্গলের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে জাপার নেতা-কর্মী ও লাঙ্গল ভক্তদের ভয়ভীতি, হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছেন। প্রতিদিন দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করছে।’ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। সিইসিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছি।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানকার বিগত সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যানে নৌকা এগিয়ে থাকলেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর কাদা ছোড়াছুড়ি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবার দুর্গ উদ্ধার করতে চায় এরশাদের জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এ আসনটি হাতছাড়া করেছে দলটি। তবে এবার ভোটযুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ছিটকে পড়াতে স্বস্তিতে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গীর।

এখানকার সাধারণ ভোটারদের দাবি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বদ্বিতা হবে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ভোটের মাঠে না থাকায় জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পার্টির। যদিও এটি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। রানীপুকুর এরশাদ মোড় বাজারের দোকানদার হাসান মাহমুদ বলেন, ‘মাঠে শুধু নৌকা ও লাঙ্গলকে দেখা যাচ্ছে। তারাই মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে ভাংনী ইউপির আবুল কাশেম বলেন, ‘আইনি জটিলতায় ধানের শীষের প্রার্থী না থাকায় ভোটাররা খানিকটা হতাশ।’ এদিকে নৌকার প্রার্থী এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ের উন্নয়ন দেখেই ভোটাররা তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে। মানুষ আগুন সন্ত্রাসীদের পক্ষে নেই। আওয়ামী লীগকে মানুষ চায়। এখানে আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই। নৌকার জোয়ারে সবাই ভেসে যাবে।’ রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৪ জন। এরমধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৮ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৬। এ আসনে ১০৭ ভোট কেন্দ্রের ৫৮৩টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ভোটাররা।

সর্বশেষ খবর