শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

পাঁচ উপজেলায় নির্বাচন নিয়ে যত শঙ্কা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা। নির্বাচনের আগেপরে নাশকতার ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে ওঠা পাঁচ উপজেলা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকু  ও মিরসরাইয়ে ফের জামায়াত-শিবির মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। দুই দিনের ব্যবধানে এ সীতাকুে  পেট্রলবোমা হামলা এবং সাতকানিয়ায় মহাজোট প্রার্থী সমর্থকদের ওপর হামলার পর দশম সংসদ নির্বাচনের   আগে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও ঘটানো হয়েছিল সেভাবে ফের নাশকতা ঘটানোর শঙ্কা সঞ্চারিত হচ্ছে অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাঁশখালী উপজেলা মিনি পাকিস্তানে পরিণত হয়েছিল। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত ভোট ডাকাতি করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতায়। এবার নির্বাচনে জামায়াতের ক্যাডাররা ভোট ডাকাতি করবে বলে শঙ্কা করছি।’ একই কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী দিদারুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ফের পরিকল্পিত হামলা শুরু করেছে। গত সোমবার পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে ১০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। আমাদের শঙ্কা, নির্বাচনে আগে তারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করবে।’

বিগত সময়ের জ্বালাও-পোড়াও ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরির কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুর এ আলম মিনা বলেন, ‘নাশকতার কথা চিন্তা করে এবার নির্বাচনে এ পাঁচ উপজেলার দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। গত নির্বাচনের মতো যাতে নাশকতাকারীরা সংঘবদ্ধ হতে না পারে সেদিকে পুলিশের নজর রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সীতাকু , বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় কয়েকটি ঘটনা হয়েছে। এগুলো আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছি না।’

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম। বিগত সময়ে এ আসনে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জামায়াতের নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাতকানিয়া ও বাঁশখালী জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ দুই আসনে জামায়াত চাইবে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। তাই এ দুই আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে জামায়াত। এ ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোয় নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টা করবে।’

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা নাশকতার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, মন্দির ভাঙচুর, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়-আদালত ভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে বিএনপি-জামায়াত। সেজন্য সীতাকু , বাঁশখালী ও সাতকানিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুধু সীতাকু  উপজেলা এলাকায় ভাঙচুর হয়েছে দেড় হাজারের ওপরে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও বাস পোড়ানো হয়েছে শতের ওপরে। একই সময় বিএনপি-জামায়াত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ব্যারিকেড দিয়ে টানা ছয় দিন অবরোধ করে রাখে।

সর্বশেষ খবর