একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা। নির্বাচনের আগেপরে নাশকতার ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে ওঠা পাঁচ উপজেলা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকু ও মিরসরাইয়ে ফের জামায়াত-শিবির মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। দুই দিনের ব্যবধানে এ সীতাকুে পেট্রলবোমা হামলা এবং সাতকানিয়ায় মহাজোট প্রার্থী সমর্থকদের ওপর হামলার পর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও ঘটানো হয়েছিল সেভাবে ফের নাশকতা ঘটানোর শঙ্কা সঞ্চারিত হচ্ছে অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাঁশখালী উপজেলা মিনি পাকিস্তানে পরিণত হয়েছিল। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত ভোট ডাকাতি করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতায়। এবার নির্বাচনে জামায়াতের ক্যাডাররা ভোট ডাকাতি করবে বলে শঙ্কা করছি।’ একই কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী দিদারুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ফের পরিকল্পিত হামলা শুরু করেছে। গত সোমবার পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে ১০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। আমাদের শঙ্কা, নির্বাচনে আগে তারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করবে।’
বিগত সময়ের জ্বালাও-পোড়াও ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরির কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুর এ আলম মিনা বলেন, ‘নাশকতার কথা চিন্তা করে এবার নির্বাচনে এ পাঁচ উপজেলার দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। গত নির্বাচনের মতো যাতে নাশকতাকারীরা সংঘবদ্ধ হতে না পারে সেদিকে পুলিশের নজর রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সীতাকু , বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় কয়েকটি ঘটনা হয়েছে। এগুলো আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছি না।’
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম। বিগত সময়ে এ আসনে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জামায়াতের নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাতকানিয়া ও বাঁশখালী জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ দুই আসনে জামায়াত চাইবে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। তাই এ দুই আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে জামায়াত। এ ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোয় নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টা করবে।’সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা নাশকতার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, মন্দির ভাঙচুর, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়-আদালত ভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে বিএনপি-জামায়াত। সেজন্য সীতাকু , বাঁশখালী ও সাতকানিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুধু সীতাকু উপজেলা এলাকায় ভাঙচুর হয়েছে দেড় হাজারের ওপরে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও বাস পোড়ানো হয়েছে শতের ওপরে। একই সময় বিএনপি-জামায়াত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ব্যারিকেড দিয়ে টানা ছয় দিন অবরোধ করে রাখে।