রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে গুমোট পরিবেশ, আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে গুমোট পরিবেশ, আতঙ্ক

রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই ১০ বছর পর এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঝে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই চারটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আর দুটি আসনে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই

করে নির্বাচিত হয়েছিলেন দুজন। এ দুটি আসনের মধ্যে এবারও একটি (রাজশাহী-৬) আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। ফলে অনেকটা বাধা ছাড়াই এবারও নির্বাচনী বৈতরণী পার হচ্ছেন ওই আসনের এমপি প্রার্থী ও বর্তমান এমপি শাহরিয়ার আলম- এমনটিই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

রাজশাহী-৬ আসনের সাধারণ ভোটারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে ভোটারদের মধ্যে, এর লেশমাত্র নেই রাজশাহীর অন্য পাঁচটি আসনে। উৎসবের বিপরীতে ভোটারদের মধ্যে আছে আতঙ্ক। সেই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের অব্যাহত ধরপাকড়ের কারণে একটা গুমট পরিবেশ বিরাজ করছে গোটা রাজশাহীতেই। রাজশাহীতে ভোটকেন্দ্রিক বিএনপি-জামায়াত নাশকতা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় বিএনপি প্রার্থী একজন জঙ্গি মদদদাতা। তিনি এলাকায় শিবির ক্যাডারদের নিয়ে ঘুরছেন। এ কারণে আমি নিজেও আতঙ্কিত। এই জঙ্গিদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় হামলা করতে পারে। ফলে নির্বাচনের দিনও এরা হামলার ছক কষতে পারে।’

তবে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক বলেন, ‘অব্যাহত ধরপাকড়ের ফলে আমাদের নেতা-কর্মীরা বাড়িছাড়া। এলাকায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী আচরণ করছে। এ অবস্থায় ভোট সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়েই আশঙ্কা আছে আমাদের মধ্যে।’

গোদাগাড়ীর পালপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো উৎসব নেই। আগে উৎসবের আমেজ দেখা দিত নির্বাচন ঘিরে। কিন্তু এবার মানুষ আতঙ্কে আছে। গুমট পরিবেশ বিরাজ করছে তানোর-গোদাগাড়ীতে।’

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা শেষ হয়। কিন্তু প্রচারণার শেষ দিন রাত থেকে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর নির্বাচন সমন্বয়ক ওয়ালীউল হক রানা। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতেও বেশ কয়েকজন ধানের শীষের পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে পোলিং এজেন্ট দিতে হয়েছে। ফলে শেষ দিকে এসে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে নগরীতেও। তবে মহাজোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার নির্বাচন সমন্বয়ক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু বলেন, ‘রাজশাহীতে পরিবেশ সুন্দর আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে প্রচারণা শেষ করেছি। কাজেই রাজশাহীতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।’ তবে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর এ আসনটিতে এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভালোই মনে হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী উৎসব মানুষের মধ্যে তেমন নেই। ভোট সুষ্ঠুমতো হবে কি না সেটি নিয়েও আশঙ্কা আছে।’

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সেই ধরনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি বিএনপি-জামায়াত কোনো নাশকতার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোটই হবে।’ তবে বিএনপি প্রার্থী শফিকুল হক মিলন বলেন, অব্যাহত হামলা, গ্রেফতারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভোট কেন্দ্রেও মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে বলে মনে করি না।’

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বলেন, ‘বাগমারায় এখন শান্তি বিরাজ করছে। ভোট সুষ্ঠু হবে বলেই মনে করছি। তবে বিএনপি-জামায়াত নাশকতার চেষ্টা করলে আমাদের লোকজনও প্রস্তুত আছে তাদের নাশকতা ঠেকাতে।’ এ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা বলেন, ‘আমাদের পোলিং এজেন্টদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরাও দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। এ অবস্থায় বাগমারায় সুষ্ঠু ভোট হবে বলে মনে হয় না।’

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী মাঠে নেই। এর পরও এখানে নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছিল গতকাল পর্যন্ত। তবে ভোট সুষ্ঠু হবে বলে আশা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। মানুষ সুন্দর পরিবেশেই ভোট দিতে পারবে বলে আশা করি।’

বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অনেক পোলিং এজেন্ট গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকায় থাকতে পারছে না। অনেকেই এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে গেছে, তাহলে ভোট কেন্দ্রে যাবে কীভাবে?’ তবে বিএনপির অনেকেই দাবি করেছেন, উচ্চ আদালতে আপিল করে নাদিম মোস্তফার কাছ থেকে ধানের শীষ প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ায় নজরুলের পক্ষে মাঠে নামেননি বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী। কিন্তু গ্রেফতার অভিযান এর পরও বন্ধ হয়নি। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এখন জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবদুস সালাম সুরুজ। তবে বিএনপি প্রার্থী আবু সাইদ চাঁদের মনোনয়ন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এ আসনে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। শাহরিয়ারের সঙ্গে বাকি দুই প্রার্থীর তেমন লড়াই হবে না বলেই ধরে নিয়েছেন ভোটাররা। এতে করে উৎসবও হারিয়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর