সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরব ছিল আওয়ামী লীগ নীরব বিএনপি

বরিশাল

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের ৮০৫টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় বিরামহীন ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়। ৮০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে কয়েকটিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। ৮০৫ কেন্দ্রের সবগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরব উপস্থিতি থাকলেও দেখা যায়নি বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট কিংবা কর্মী-সমর্থককে। বরিশাল জেলায় আসনভেদে ৬৫ থেকে ৮০ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। সকাল সোয়া ৯টায় বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ভোট দেন আগৈলঝাড়া উপজেলার শেরাল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভোট প্রদান শেষে প্রতিক্রিয়ায় হাসানাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নৌকার বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে সকাল ১০টার মধ্যে ক্ষমতাসীনরা সব কেন্দ্র দখল করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার অভিযোগে নিজের ভোটটিই দেননি ওই আসনের বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এম জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনি প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। এই আসনের ১১৫ কেন্দ্রের কোথাও আওয়ামী লীগ ব্যতীত অপর ৩ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। বরিশাল-২ আসনের প্রতিটি কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে এই আসনের ১৩৬টি কেন্দ্রের কোথাও বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্টের পোলিং এজেন্ট কিংবা কোনো নেতা-কর্মী দেখা যায়নি। বরিশাল-৩ আসনের ১২৩ কেন্দ্রে দেখা গেছে ব্যতিক্রম চিত্র। এখানকার বেশিরভাগ কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের পোলিং এজেন্ট দেখা গেছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকলেও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপুর লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে সরব দেখা গেছে। বরিশাল-৪ আসনের ১৪৮ কেন্দ্রের কোথাও বিএনপি তথা ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জে এম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর। এ ছাড়াও বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। ভোটের সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ না থাকায় দুপুর আড়াইটার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর। তবে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওই আসনে নৌকার প্রার্থী পংকজ নাথ বলেন, গণজোয়ারে ধানের শীষ ভেসে গেছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাঝপথে ভোট বর্জন করেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। বরিশাল-৫ আসনের ১৭৪ কেন্দ্রে গতকাল সকালে ভোট শুরুর আগে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীনরা ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। কোনো কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল সদরে ক্ষমতাসীনদের হামলায় বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন সরোয়ার। তার দাবি, আগের রাতেই অর্ধেকের বেশি ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্সে ভোট ভরে রেখেছে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীনরা। এই ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, দলীয় সরকারের অধীনে নিজে আর কখনো প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। শুধু সরোয়ার নয়, এই আসনে ভুয়া, প্রহসন এবং জবরদস্তিমূলক ভোটের অভিযোগে বিকাল ৩টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার এই নির্বাচনকে ভুয়া, প্রহসন এবং জবরদস্তিমূলক উল্লেখ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দাবি করেন। তবে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাে র কারণে নৌকার পক্ষে জোয়ার এবং নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বিরা মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে দাবি করেন বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম (অব.)। সদর আসনের নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারৈজ্জারহাট কেন্দ্রে ভোট কারচুপিতে বাধা দেওয়ায় ক্ষমতাসীনরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৭ কর্মী হাফেজ ইব্রাহীম খলীল, মুহাম্মাদ হুসাইন, জিহাদুল ইসলাম, আবদুল জলিল, আবদুল কাইউম, বশির খান ও হাফিজুর রহমান আহত হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন হাতপাখা প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. শরীয়াতুল্লাহ। বরিশাল-৬ আসনের ১০৯টি কেন্দ্রের বেশিরভাগে আগের রাতেই প্রায় অর্ধেক ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্সে ভরে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই আসনের বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন খান। গতকাল দুপুর আড়াইটায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবুল হোসেন খান বলেন, আগের রাতে প্রায় অর্ধেক ভোট কেটে রাখার পরও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেনি সেখানকার ক্ষমতাসীনরা। গতকাল সকালেও পুলিশ পাহারায় আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল দিয়েছে। ধানের শীষের পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কাউকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মাঠে দাঁড়াতে পারেনি এবং দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন আবুল হোসেন খান। এ ছাড়া এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওচমান হোসেন মনির বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বিচ্ছিন্ন দুই-একটি ঘটনা ছাড়া বরিশালের ৬টি আসনে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন। জেলায় আসন ভেদে ৬৫ থেকে ৮০ ভাগ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পেরেছেন বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর