সিলেট-১ আসন ঘিরে ঐতিহাসিক একটি মিথ রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, সে দলই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মর্যাদাপূর্ণ এ আসনটির দিকে চোখ ছিল সারা দেশের। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন আসনটিতে বিজয়ের হাসি হেসেছেন। এর মধ্য দিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেল। অবশ্য নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের জয় নিয়ে আশায় ছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। সিলেট-১ আসনে জয় পেতে সব দলই মরিয়া ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আসনটি নিজেদের দখলে নিতে ‘পাখির চোখ নিয়ে’ মাঠে নেমেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে সিলেট-১ আসনে এসে নির্বাচনী জনসভা করে গেছেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সিলেটে এসে মাজার জিয়ারত করে প্রচারণা চালিয়ে যান। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির আটঘাট বেঁধে মাঠে নামেন। উভয়েই ভোটারদের মন জয় করতে বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন। তবে ভোট গ্রহণ শেষে প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলে শেষ হাসি হেসেছেন ড. মোমেন। গতকাল রাতে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের চেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন ড. মোমেন। এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন। জীবনের প্রথম নির্বাচনেই বিজয়ী হয়ে বাজি মাত করেছেন তিনি।
এদিকে খন্দকার মুক্তাদির দিনভর নানা অভিযোগ করলেও নিজের জয়ের ব্যাপারে ছিলেন আশাবাদী। গতকাল সকালে নগরীর সারদা হলে ভোট প্রদান করে তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। দুপুরের পর সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তাদির বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদান, অনিয়ম ও বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার নিজে ব্যালটে সিল মেরেছেন।’ ওই সময় তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। মুক্তাদির আশায় ছিলেন, গেল জুলাইয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী যেভাবে শেষবেলায় বিজয়ীর হাসি হেসেছিলেন, সেভাবে এবারও ‘কিছু ঘটতে পারে’। তবে মুক্তাদিরের আশা পূর্ণতা পায়নি।