শিরোনাম
বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কমছে অতিথি পাখি

হাওরের কান্না : (শেষ)

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

কমছে অতিথি পাখি

শ্রীমঙ্গল হাইল হাওর বৈচিত্র্যে অপূর্ব। বর্ষায় দিগন্তজুড়ে পানি আর পানি।  হাওর পাড়ে হিজল-কড়চের সবুজ বনায়ন। হাওরের বাইক্কা বিলে মাছের অভয়াশ্রমে কিছুদিন আগেও পাখিরা স্থায়ী বাসা বেঁধেছিল। বছরজুড়েই হাইল হাওরে কানপাতা দায় হতো বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখির কলতানে। আর শীত এলে যোগ দেয় পরিযায়ী পাখির দল। শুকনো মৌসুমে হাওরের পানি কমে গেলে খুব কাছ থেকেই দেখা যেত হাওরের জলে মাছের ভেসে বেড়ানো দৃশ্য। আর পাশে বসে থাকা অতিথি পাখিদের খুনসুঁটি। হাওর পাড়ে হিজল-করচ বনে পাখিদের কিচির-মিছির শব্দে এক মধুময় শব্দের আবহ বিরাজ করে। পাখিদের সেই কলতান পর্যটকদের মন ভালো করে দেয়। কিন্তু সেই হাইল হাওরে কমে যাচ্ছে অতিথি পাখি। পাখি বিষারদরা বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাওয়াকে পরিবেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে জানান।

মূলত আশির দশক থেকে মনুষ্য সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে এই হাইল হাওরটি ধ্বংস হতে শুরু হয়।  ১৯৯৯ সালে Management of Aquatic Ecosystems through Community Husbandry (MACH) প্রকল্প দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে এই হাইল হাওরের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করে। তারা হাওরে মাছের উৎপাদন ও বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় মানুষদের নিয়ে জলাভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন (আরএমও) গঠন করে। হাওরে ছাড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের পোনা। প্রাকৃতিক বাদাবন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাওরের বাইক্কা বিলের পাড়ে  ৪৫ হাজার হিজল, করচ, জারুল ও বরুন  গাছের চারা রোপণ করে। পাশাপাশি লাগানো হয় বাঁশের চারা, অর্জুন, ক্ষুদিজাম, বট, কাইনজাম, কদম, নিম, মেরুল ও শিমুল গাছের চারা।

 কয়েক বছরের মধ্যেই হাওরে হারিয়ে যাওয়া মাছ, গাছ ও পাখি পুনর্বাসিত হতে শুরু করে। বাইক্কা বিলের কাগাউড়া কান্দি ও বড়গাঙ্গিনা খালের পাড়ে লাগানো হিজল করচ গাছে বাসা বাঁধে দেশীয় প্রজাতির পাখি। অর্জুন, জারুল, বটসহ লাগানো গাছে পশু-পাখিদের খাবার জোগায়। আর হাওরের পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় হিজল গাছ থেকে তৈরি হয় এক ধরনের খাবার যা মাছের খুব প্রিয়। কিন্তু প্রকৃতি বিনাশকারীদের লোলুপ দৃষ্টির কারণে বছর দুয়েক ধরে ফের পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত বছর বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখি এসেছিল মাত্র পাঁচ হাজার। চলতি বছরও বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি কম এসেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রথম বাইক্কা বিলে পাখিশুমারিতে ২৯৬টি জলচর পাখি দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালে ১ হাজার ১৭৪টি, ২০০৬ সালে ৬ হাজার ৯৪৯টি, ২০০৭ সালে ৭ হাজার ২০৪টি, ২০০৮ সালে ৬ হাজার ৪২৯টি, ২০০৯ সালে ৯ হাজার ৪০৫টি, ২০১০ সালে ১২ হাজার ২৫০টি, ২০১১ সালে ৫ হাজার ৯৮৯টি, ২০১২ সালে ৩ হাজার ৯৬৪টি, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ৪৯৯টি, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৪৭৯টি, ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৯৯১টি, ২০১৬ সালে ৩১ প্রজাতির ৮ হাজার ৮৩১টি ও ২০১৭ সালে ১০ হাজার ৭১৩টি পাখি বাইক্কা বিলে দেখা যায়।  কিন্তু গত বছর পাখির সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪১৮টি। ক্রেল-এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক পলাশ সরকার বলেন, হাইল হাওরের বিলে সেচ দিয়ে মাছ ধরার কারণে জলজ উদ্ভিদ ও বিলের প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই জলজ উদ্ভিদগুলোই পাখিদের খাবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর