কক্সবাজারের পাসপোর্ট ও নির্বাচন কমিশন অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দালালদের মাধ্যমে বেআইনিভাবে এ দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করছে এমন অভিযোগে গতকাল এ অভিযান চালানো হয়। দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।
দুদকের টিম কক্সবাজার নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে সম্প্রতি যত জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অফিস থেকে যত পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে তা যাচাইয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে। একই টিম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন অনিষ্পন্ন থাকার বিষয়ে অভিযান চালায়। দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চলে। দুদক টিমের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পুরো গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তা দেয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমারজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের প্লাস্টার খসে পড়ায় পাঠদানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এমন অভিযোগে দুদক অভিযান চালায়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দুদক টিম কথা বলে। উপজেলা প্রকৌশলী জানান, সম্প্রতি নির্মাণাধীন বিদ্যালয়টিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে ঠিকাদারকে কাজটি পুনরায় যথাযথভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুদক টিম যথাযথভাবে যাচাই করে সম্পাদিত কাজ বুঝে নিতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিড়াশাখবিউধ্যার বাজার থেকে ১৫০০ মিটার সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দেওয়ার অভিযোগে দুদকের ময়মনসিংহ কার্যালয় অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের জন্য যন্ত্রপাতি কেনার নামে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবজাল হোসেন-রুবিনা দম্পতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমতি দেওয়া হয়।
শিগগিরই মামলাটি করা হবে বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম যাচাই করে অনিয়মের তথ্য পেয়েছে কমিশন।সূত্র জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি আবজাল, তার স্ত্রী রুবিনা খানম এবং তাদের ১৫ জন নিকটাত্মীয়ের সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। সুনির্দিষ্টভাবে এই ১৭ জনের সম্পদের সন্ধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে যাদের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়, তারা হলেন আবজাল হোসেন, রুবিনা খানম, তাদের ছেলে রুলমান আহমেদ রাকিব, দুই মেয়ে আনিকা সুলতানা রূপা ও আদিবা সুলতানা রথী, শ্বশুর জয়নাল তালুকদার, শাশুড়ি রেহেনা বেগম, তিন শ্যালক রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও শরিকুল ইসলাম; তিন শ্যালকের স্ত্রী রুমানা, রুমা খান ও লিমা আক্তার, দুই ভাই বেলায়েত হোসেন ও লিয়াকত হোসেন, দুই ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার ও নাসরিন আক্তার লাকি। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজালকে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।