শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বগুড়ায় বিএনপির সোয়া লাখ ভোট কোথায় গেল

উপনির্বাচন শেষে জনগণের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

এত দিন টের পাওয়া যায়নি। এখন পাওয়া যাচ্ছে। বগুড়ায় বিএনপির ঘরে ছিল দ্বন্দ্ব। বগুড়া বিএনপি নেতাদের মেধাশক্তি দিয়ে চলে না, চলে লন্ডনের ছকে। নেতারা এত দিন পদের আশায় প্রভাব খাটিয়েছেন মাত্র। আর সাধারণ ভোটার উন্নয়নের আশায় বার বার ধানের শীষে ভোট দিলেও নেতারা থেকেছেন গলাসমান দ্বন্দ্ব নিয়ে।

এ দ্বন্দ্বের জেরে নিজের ঘরে নিজেই দিয়েছিল তালা, দিয়েছিল আগুন, করেছিল ভাঙচুর। এসবের পর আবারো লন্ডনের ফোনে বিএনপির কর্মীরা বাঁকা পথ ছেড়ে সোজা পথে এলেও উপনির্বাচনে ভোট পেয়েছে কম। ভোট কম পেয়েছে প্রায় সোয়া লাখ।

জানা যায়, বগুড়া জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র করে দলে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। দ্বন্দ্বের জের ধরে জেলা বিএনপি অফিসে ১৪টি তালা ঝোলানো হয় যা বজায় ছিল ১৫ দিন। বিএনপির নির্বাহী কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সৃষ্ট সংকটের মধ্যেই উপনির্বাচনের সময় এসে পড়ল। বিএনপির এক ভাগ নির্বাচনমুখী আর অন্য ভাগ আহ্বায়ক     কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। নির্বাচন একেবারে কাছে চলে এলে লন্ডন থেকে ফোনে এ বিরোধ মেটানো হয় এবং ঐক্যবদ্ধ থাবার নির্দেশ দেওয়া হয়। বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে লড়বার জন্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে মনোনীত করা হয় এবং তিনি জয়ী হন। বিএনপি কোনো নির্বাচনেই এ আসনে এত কম ভোট পায়নি।

 দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আসনে প্রার্থী হয়ে ২ লাখের ওপরে ভোট পেয়েছেন। এ আসন এলাকায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বগুড়া-৬-এ প্রার্থী হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ আসনে ভোট পান প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার। ২৪ জুন উপনির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ পেলেন ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ধানের শীষে ভোট কম পড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার! এ ভোটগুলো গেল কোথায়?

বগুড়া জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বগুড়া জেলা কমিটি শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২৫ এপ্রিল জেলা বিএনপির নেতৃস্থানীয়দের ডেকে পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় অফিসে। সেখানে জেলা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের কমিটি নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা কমিটির নেতারা উত্তেজিত হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিত ায় জড়িয়ে পড়েন। এর বেশ কিছু দিন পর জেলা বিএনপি ২৯ এপ্রিল সাধারণ সভা আহ্বান করে। সভায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চানসহ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একই দিন সন্ধ্যায় সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান লালুর বাড়িতে এক বৈঠকে পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দুটি কমিটি গঠনেই জেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এরপর ১৫ মে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ভিপি সাইফুল ইসলামের অনুসারীদের নাম কম থাকায় বিএনপির একদল নেতা-কর্মী বিক্ষোভ করেন, তালা ঝোলান ও অগ্নিসংযোগ করেন। ভোটের আগে লন্ডন থেকে আসা ফোনে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে বলার পরও গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের পক্ষে সোয়া লাখ ভোট কম পড়ল!

বগুড়ার বিএনপি নেতা বগুড়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা জানান, বিগত দিনগুলোয় যে ধরনের ভোট হয়েছিল তাতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটের আগ্রহ কম। মনে হচ্ছে সে কারণে ভোটার কম ছিল।

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, কিছু নেতা ভুল বুঝেছিলেন। তাদের ভুল ভেঙে গেছে। এখন বিএনপি একত্র হয়ে কাজ করছে। তিনি জানান, ‘বগুড়ায় বিএনপি এক। কোনো গ্রুপিং নেই। বরং এখন বিএনপিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন শেষ, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি আমরা। তারেক রহমান আমাদের নেতা, তার নামে যত হয়রানিমূলক মামলা আছে সেসব প্রত্যাহার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’

কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আলহাজ মোশারফ হোসেন জানান, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনে গতিবেগ আনবে আহ্বায়ক কমিটি। উপনির্বাচন শেষ হয়েছে, আবারও নতুন করে প্রাণশক্তি পাবে বিএনপি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর