চট্টগ্রামে ‘ক্লু’-লেস হয়ে পড়ে আছে আলোচিত সব মামলা। এসব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কেটে গেছে মাসের পর মাস। কোনোটির কেটে গেছে আবার বছরের পর বছর। মামলার তদন্ত কয়েক হাত ঘোরার পরও ফলাফল শূন্য। উদ্ঘাটিত হয়নি খুনের কারণ কিংবা পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঘটনার হোতাকে। আবার যে মামলাগুলো চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এমন অবস্থায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় নিহতদের পরিবার।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) আমেনা বেগম বলেন, ‘মামলা তদন্তে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। চার্জশিট দেওয়ার পর আদালত চাইলে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘আলোচিত সব মামলা নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। তদন্তের কাজ শেষ হচ্ছে না বলেই চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবের কারণেই মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না। কিংবা অসম্পূর্ণ চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। এমন নয় যে প্রতিটা ঘটনাই ‘পারফেক্ট ক্রাইম’। এ মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা হয় অদক্ষ, না হয় তাদের গাফিলতি রয়েছে।’ কয়েকটি মামলার বাদীদের সঙ্গে কথা হলে তারা দাবি করেন, তদন্তে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রভাবশালী মহলের চাপ। তাই পুলিশ অপরাধীদের রক্ষা করতে কালবিলম্ব করছে। গত বছর ১ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটের ফরিদাপাড়ায় নিজ বাসায় খুন হন আইনজীবী এহতেশামুল পারভেজের স্ত্রী বিবি রহিমা। এ খুনের পরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। তারাও ব্যর্থ হওয়ার পর বর্তমানে এ খুনের তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত বছর ২৭ জুন বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডে খুন হয় স্কুলছাত্রী ইলহাম বিনতে নাছির। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে এ মামলার বর্তমান তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। তিন সংস্থা তদন্ত করলেও এখনো ঘটনাটিও ক্লু-লেস। ২০১৬ সালের ৫ জুন খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। দেশ তোলপাড় করা এ মামলার তিন বছর পার হলেও পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি কী কারণে মিতু খুন হয়েছেন, আর ঘটনার পেছনে মূল হোতা হিসেবে কে কাজ করেছে। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি পাঁচলাইশ থানাধীন চকবাজার এলাকায় খুন হন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষক অঞ্জলি রানী দেবী। এরই মধ্যে থানা পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বদল হয়েছে কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু সাড়ে চার বছর পরও কেউ বের করতে পারেনি এ খুনের কারণ। কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কাউকে। এ ছাড়া মাসের পর মাস ক্লু-লেস অবস্থায় থাকা আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলা, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলা, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে খুন হওয়া যুবলীগ নেতা অমিত মুহুরী হত্যা মামলা, তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলা, বিমান ছিনতাইচেষ্টা মামলাসহ বিশের অধিক আলোচিত মামলা।