সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দিন পাল্টেছে আওয়ামী লীগের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

দিন পাল্টেছে আওয়ামী লীগের

১৯৯৪ থেকে ২০১৯ সুদীর্ঘ ২৪ বছরের বেশি সময় বগুড়ায় আওয়ামী লীগের কা ারি ছিলেন তিনি। সেই দাপুটে নেতা মরহুম মমতাজ উদ্দিনের অভাব বোধ করছেন নেতা-কর্মীরা। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগে তাকে কেন্দ্র করে গ্রুপভিত্তিক দ্বন্দ্ব থাকলেও তেমন একটা প্রকাশ্যে আসেনি মমতাজ উদ্দিনের জীবদ্দশায়। কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে। বগুড়া আওয়ামী লীগে তারুণ্যের জোয়ার লেগেছে। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নতুন নেতার দায়িত্ব নিতে দেখা যাচ্ছে। এদিকে এ সময়ে দলের ভোটার না বাড়লেও ব্যক্তির সম্পদ বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। মমতাজ উদ্দিন বিভিন্ন পর্যায়ে দলের দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আমৃত্যু সভাপতির পদে থেকেছেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। ২৪ বছর বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন মমতাজ উদ্দিন। মমতাজ উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে দলে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নতুন কা ারির খোঁজে দলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি শুরু হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কিছু ত্যাগী কর্মী জানান, কিছু নেতা রয়েছেন যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তারা অন্য দলের খোঁজ রাখেন না, আবার নিজ দলের কর্মীদেরও খোঁজ রাখেন না। তদবির আর তেলবাজি করে দলের একটি পদ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকছেন। মাঝে মাঝে নিজেদের পদ ও পদবি জানান দিতে নানা রঙের ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে শহরে ঝুলিয়ে দেন। অনেকের নামে অভিযোগ উঠেছে, তারা দলের নাম ভাঙিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার পরও বগুড়া জেলায় চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন হয়নি। শহরে দৃশ্যত রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এতে বগুড়াবাসী হতাশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর নাখোশ। কেননা জেলার উন্নয়ন না হলেও ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার উন্নয়ন হয়েছে। তবে কিছুদিন হলো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে নতুন নতুন নেতা-কর্মী দেখা যাচ্ছে। তারা অনেকেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। এই নতুনদের দিকে তাকিয়ে আছেন দলের সাধারণ কর্মী ও সমর্থকরা। জেলা সভাপতি পদে এখন ভারপ্রাপ্ত হয়েছেন ডা. মকবুল হোসেন।

ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের অনেকে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক শুরু করেছেন।

যারা মমতাজ উদ্দিনের বিপক্ষে ছিলেন তারা এখন দলের কার্যালয়ে নিয়মিত হতে শুরু করেছেন। তারাও পদের আশায় নতুনদেরকে আশ্রয় দিতে শুরু করেছেন। যদিও মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর দলের অভ্যন্তরে চেইন অব কমান্ডে ভাটা পড়েছে। অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বয়সে তরুণ নেতাদের। মমতাজ উদ্দিনের পর তরুণরা সাংগঠনিক কর্মকাে  তৎপর হওয়ার কারণে কিছুটা হলেও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দিন যেন পাল্টেছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বগুড়ায় তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি বা সরকারের সফলতা তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের তেমন দেখা যায় না। দলটির হয়ে জেলায় ভোট বাড়ানোর পক্ষেও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। জেলা নেতাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু জানান, সুযোগ সন্ধানীরা দলকে শেষ করে ফেলছে। নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই দলের বারোটা বেজে গেছে। বিগত ’৯৬ সাল থেকে আজ অবধি বগুড়া জেলায় আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাব মিলালেই এটার প্রমাণ মিলবে। তিনি বলেন, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে। শক্তভাবে দলের হাল ধরে ভবিষ্যতে দলীয় ভোটার বাড়াতে হবে। ভোটার না বাড়াতে পারলে অন্য দলগুলো সুবিধা আদায় করবে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু বলেন, যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের হিসাব নেবে প্রশাসন। দল কোনো হিসাব নেবে না। বড় সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। এখন দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রতিযোগিতা আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর