চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশেই পশ্চিম দেওয়াননগর সন্দ্বীপপাড়া। এই পাড়ায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের বসবাস। অথচ এখানে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। কিন্তু শিক্ষার চরম উৎকর্ষের এই সময়ে পৌরসভা এলাকার একটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার বিষয়টি বিস্ময়ের। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে এ শূন্যতা ঘুচেছে। জরাজীর্ণ স্কুল পেয়েছে নতুন অবয়ব। গত ২৬ আগস্ট থেকে এখানে শুরু হয়েছে নিয়মিত ক্লাস। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। নিকটবর্তী স্কুলের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। তাছাড়া ওই এলাকার প্রায় সবাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্কুলটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন, তখন এ রকম একটি এলাকায় জরাজীর্ণ প্রাইমারি স্কুল থাকাটা ভাবাই যায় না। তাই বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা করি।’ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপপাড়ার শিশুদের শিক্ষায় ১৯৯৭ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্প শেষ হওয়ায় স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিদ্যালয়টি ক্রমাগত জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হতে হতে প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে তৈরি করা হয় নতুন ভবন। নির্মাণ করা হয় দরজা, জানালা, দেয়াল, টিনের ছাদ ও সিলিং। তিনটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ নতুন করে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে দেওয়া হয় নতুন বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক পাখা, নতুন ব্ল্যাকবোর্ড। শিক্ষকদের জন্য তৈরি করা হয় পৃথক ‘টিচার্স রুম’। অ্যাসেম্বলির জন্য দেওয়া ফ্লাগস্ট্যান্ড ও নতুন জাতীয় পতাকা। স্থাপন করা হয় গভীর নলকূপ। ছিল না কোনো বাথরুম। প্রয়োজনে যেতে হতো আশপাশের বাড়িতে। বাথরুমের অভাবে অনেক ছাত্রী বিদ্যালয়েই আসতে চাইত না। চারপাশে দেওয়া হয় টিনের ঘেরাও। স্কুলের মাঠটি উপযোগী করা হয় খেলাধুলার জন্য।
জানা যায়, সন্দ্বীপপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। এখানকার কেউ দিনমজুর, কেউ রিকশা ও অটোরিকশা চালক, কেউ বর্গাচাষি, কেউ গার্মেন্টকর্মী ও কেউ বাবুর্চি। টাকা দিয়ে ভর্তি কিংবা মাসিক বেতন দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা বা সামর্থ্য নেই অনেকের। ফলে প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ে স্কুলটি। স্কুলে নেই শিক্ষকের বেতন। কিছু তরুণ ছেলেমেয়ে আর একজন প্রবীণ শিক্ষক মিলে বিনা বেতনে চালাচ্ছিলেন স্কুলটি। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানতে পেরে পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।