সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ নৌকা ডুবিয়ে চেয়ারম্যান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ নৌকা ডুবিয়ে চেয়ারম্যান

পুলিশের ওপর একাধিকবার গুলিবর্ষণ, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, বালু ও পাথরবোঝাই নৌকা থেকে চাঁদাবাজি, নিজ বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিসহ অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তিনি সিলেটের জালালাবাদ থানার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনফর আলী। যার রয়েছে নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী দিয়েই এলাকায় দাপটে আছেন মনফর আলী। তার বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকেন এলাকার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনফর আলী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির ক্ষমতাকালে তিনি সরব ছিলেন দলটির কর্মকান্ডে । কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খোলস পাল্টান তিনি। স্থানীয় কয়েকজন নেতার আশীর্বাদ নিয়ে তিনি ভিড়েন আওয়ামী লীগে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক না পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সমর্থন নিয়ে ভোটের মাঠে ডুবিয়ে দেন নৌকা প্রতীককে। দলে অনুপ্রবেশকারী মনফর আলীর কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশ্রব আলী। এরপর থেকে ক্রমেই উঁচু হতে থাকে তার অপকর্মের পাহাড়। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের জালালাবাদস্থ চেঙ্গেরখালে বালু ও পাথরবোঝাই নৌকা থেকে চাঁদাবাজি করে মনফর বাহিনীর প্রায় ৫০ সদস্য। নৌকা প্রতি তার বাহিনীকে দিতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। চাঁদা না দিলে নৌকা আটকে রাখেন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে। চলতি বছরের ১৯ জুন মনফর বাহিনীর চাঁদাবাজি বন্ধ করতে অভিযানে যায় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করেন মনফর আলী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। গেল ২৫ জুলাই জালালাবাদের খাশরগাঁওয়ে মনফর বাহিনীর সদস্য জয়নাল আবেদীনকে গ্রেফতার করতে গেলে ফের পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন তিনি। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে আদালতে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তি দেন গ্রেফতারকৃত জয়নাল। এ ছাড়া মনফর বাহিনীর সদস্য জবান আলী ও একরাম আলীকে গেল জুলাইয়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে তারা জবানবন্দিতে মনফর বাহিনীর অপকর্মের তথ্য তুলে ধরেন। এমনকি মনফর আলী নিজবাড়িতে ভাড়াটে কারিগর দিয়ে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেন বলেও স্বীকারোক্তি দেন ওই দুজন।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, মনফর আলীর বিরুদ্ধে তার বাহিনীর ৪ সদস্য আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিলেটের তিন থানায় মনফরের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা আছে। তন্মধ্যে ৬টি মামলা আদালতে বিচারাধীন, ৪টি তদন্তাধীন।

তিনি জানান, মনফর আলীকে গত শুক্রবার রাতে একটি বিদেশি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি ও একটি ছোরাসহ গ্রেফতার করা হয়। গতকাল শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ রবিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর