বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সোনালি আঁশ ব্যবহার করেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন নেত্রকোনার কামরুন্নাহার। হারিয়ে যাওয়া পাটকে তিনি তুলে এনেছেন আবারও। এতে কর্মসংস্থানও হয়েছে এলাকার নারী-পুরুষের। বিশে^র শীত প্রধান দেশগুলোর জন্য তৈরি হচ্ছে পাটের জুতো। তা থেকে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। এভাবেই নেত্রকোনায় ফিরে আসছে সোনালি আঁশের দিন।
শহরের চল্লিশা এলাকায় রাজেন্দ্রপুর বিসিক শিল্প নগরীতে নবাবী ফুট ওয়ার নামের একটি জুতা উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি হয়েছে। যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে পাট। আর সে পাটের জুতো যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়। ২০১৫ সাল থেকে চালু হয়েছে কারখানাটি। এতে ৩৫ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। যারা আগে ঢাকায় কাজ করতেন এখন তারা নিজ এলাকায় স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করতে পারছেন। এতে যেমন আয় হচ্ছে তেমনি সন্তানদের পাশে থেকেই লালন পালন করতে পারছেন তারা। এছাড়াও রয়েছে অনেক তরুণী, যারা এখন উপার্জন করতে পারছেন। যে কারণে বাল্যবিয়ে থেকে বেঁচে গেছেন অনেকে। কারখানাটিতে বর্তমানে ২০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ রয়েছেন। এখান থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা রপ্তানি হচ্ছে স্পেন, আমেরিকা, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে। জানা গেছে, ২০০৩ সালে জেলার সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় শিল্প নগরীটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৮ জন উদ্যোক্তার মাধ্যমে ১০৩ টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৭টি শিল্প ইউনিট চালু রয়েছে। আরও ১৪টির যন্ত্রপাতি স্থাপিত হয়েছে। এখন শুধু উৎপাদনের অপেক্ষায়। কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ না থাকায় উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই শিল্প স্থাপনে অনীহা দেখাচ্ছেন।
যদি গ্যাস সংযোগ পাওয়া যেত তাহলে দ্রুত শিল্পায়ন হতো। সেই সঙ্গে কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হতো বলে জানান বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক মো. আক্রাম হোসেন। তিনি জানান, এখানে একটি শিল্প কারখানা রয়েছে। যেটিতে পাট থেকে জুতা, ব্যাগ ও শোপিচ তৈরি হচ্ছে। আর সেগুলো ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এখানেও গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস থাকলে উৎপাদন খরচ কমে আসত। পাশাপাশি এই কারখানায় আরও ৩০০’র মতো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।কারখানায় কর্মরত সিনিয়র অপারেটর আবু সালেক ও স্ত্রী মিতা আক্তার জানান, তারা আগে ঢাকা এবং কুমিল্লায় কাজ করতেন। এতে করে যা আয় হতো তাই-ই ব্যয় হতো। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কলমাকান্দা উপজেলা থেকে এসে কাজ করছেন। পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনাও দেখভাল করতে পারছেন।
কারখানাটির উদ্যোক্তা কামরুন্নাহার খানম লাকী জানান, তিনি পড়াশোনা করে জীবনে ব্যবসা করবেন বলেই ভাবতেন। পরবর্তীতে যার সঙ্গে বিয়ে হয় কে এম জহির, তিনিও একজন ব্যবসায়ী। এরপর মনে হলো স্বামীর সঙ্গেই পার্টনারশিপে কাজ করার। ২০১৫ সালে তিনি নিজ জেলায় গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠান, যা ব্যতিক্রমী। সোনালি আঁশকে কাজে লাগানো হলো। পাশাপাশি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়ে গেল। তিনি বর্তমানে এই নবাবী ফুট ওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। তিনি বলেন, বিশে^র বিভিন্ন শীত প্রধান দেশের অর্ডার আসে তখন তাদের রুচিমতো ডিজাইন দিয়ে তৈরি করে পাঠাই। গত বছর এক কন্টেইনার মাল পাঠানো হয়েছে।