চলতি বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হবে বলে কথা দিয়েছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। ২৯ বছর ধরে অচল থাকা রাকসু নির্বাচন নিয়ে অনেক আশা বেঁধে ছিলেন ছাত্রনেতারা। কিন্তু সেই আশার গুড়েবালি। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ বছরও হচ্ছে না রাকসু নির্বাচন। এদিকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে। এর আগে বছরের শুরুর দিকে রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেছিলেন, ‘যারা নির্বাচন করবে তারা কত তাড়াতাড়ি প্রস্তুত। তাদের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন কবে হবে। আমার মনে হয় এ বছরই নির্বাচন হওয়া উচিত। আমি আশাবাদী চলতি বছরই রাকসু নির্বাচন হবে।’ তবে বছরের শেষ প্রান্তে এসেও রাকসু নিয়ে কোনো ধরনের মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। রাকসু সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০ জানুয়ারি ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে কমিটি গঠনের পর ১২টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, ৯টি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং ৪টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। সর্বশেষ ২০ সেপ্টেম্বর শাহ মখদুম হলে রাকসু সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে নির্বাচন ঘিরে আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। ১০ মাস ধরে শুধুই সংলাপে সীমাবদ্ধ থাকায় সংলাপের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বর্তমান প্রশাসনের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা মনে করেন, বর্তমান প্রশাসন দিয়ে রাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা রাবি শাখা ছাত্রলীগ রাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছিল হলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে। সংলাপ শেষ হওয়ার পর যদি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে না পাই, তাহলে আবার কথা বলব, যাতে দ্রুত রাকসু নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে।’
এদিকে চলতি বছরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না দিলে কঠোর আন্দোলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘আমরা যখন আন্দোলনে নামলাম, তখন প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের কথা বলে বিভিন্ন সংলাপের আয়োজন করল। ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ শেষ হওয়ার পর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দেখছি সংলাপের নামে নাটক করা হচ্ছে। কোনো দৃশ্যমান ফল আমরা এখনো দেখতে পাইনি। আমরা প্রশাসনকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছি তারা সব কাজ শেষ করুক। এর ভিতর যদি তারা স্বেচ্ছায় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা না করে, জানুয়ারি থেকে আবার আন্দোলনে নামব। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানকে একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।