রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুদকের হটলাইনে ৩১ লাখ ফোন

অভিযোগ ঘুষ, অবৈধ সম্পদ, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার

আহমেদ আল আমীন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইনে জমা পড়েছে পাহাড়সম অভিযোগ। এসব অভিযোগের প্রায় সবগুলোই ঘুষ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার- এরকম আরও অপরাধের বিরুদ্ধে। গত দুই বছরে এসব অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইনের ১০৬ নম্বরে ৩১ লাখ ফোনকলের মাধ্যমে। এসব দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিকার ও প্রতিরোধে কমিশনের কাছে আসা ফোনকলের ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। এর পাশাপাশি তফসিল বহির্ভূত অভিযোগেও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দুদকের হটলাইনে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের প্রায় ৩১ লাখ ফোনকল এসেছে। এরপর যে ফোনকল এসেছে তার হিসাব এখনো করেনি দুদক। এই দুই বছরে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফোন এসেছে। এর ভিত্তিতে ৬২৬টি প্রতিরোধমূলক অভিযান চালানো হয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, দৈনিক সাড়ে ছয় হাজার ফোনকল দুদকের প্রতি জনগণের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। হটলাইনের ১০৬ নম্বরটি রাডারের মতো ব্যবহার করে কমিশন পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষ তথা ভুক্তভোগীর দুয়ারে। এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, সরকারি সম্পদ আত্মসাতের ঘটনা। এ বিষয়ে দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, দুর্নীতি সংঘটনের আগেই তা প্রতিকার ও প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রে হটলাইন চালু হয়েছে। এতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভিযোগ জানাচ্ছে, ফলে দুদকের দায়িত্ববোধ বেড়ে গেছে। কিন্তু আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে তফসিলের বাইরে         অন্য সব অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। দুদদের হটলাইন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ জানানোর প্লাটফরম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তফসিলভুক্ত অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ জানালেই দুদক টিম অভিযানে যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হটলাইনে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও অভিযান চালানো হচ্ছে। অনেক সেবাপ্রত্যাশীকে দুদকের হস্তক্ষেপে প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধনও প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায়ও দুদক অভিযানে যাচ্ছে। অভিযানে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিশনের সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। দুদক সূত্র মতে, হটলাইনে আসা অভিযোগগুলোর বেশির ভাগই এসেছে মাঠপর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের দফতর সম্পর্কে। এ ছাড়া সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর ও সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান চালিয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের তিনতলায় স্থাপিত অভিযোগ কেন্দ্রে কমিশনের পাঁচজন কর্মকর্তা পালাক্রমে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে হটলাইনে নাগরিকদের ফোনকল রিসিভ করেন। অভিযোগ কেন্দ্রের সব কার্যক্রম ডিজিটাল মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান, কমিশনার এবং সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত অভিযোগ কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অন্যান্য অপরাধ কমাতে দুদকের এই হটলাইন কার্যক্রম ভুক্তভোগী মানুষের মুখে আশার আলো দেখাচ্ছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর